আগের পর্বটি শেষ করেছি জৈন ধর্ম নিয়ে। হ্যাঁ জৈন ধর্ম সংযমতার দিক থেকে খুবই কঠোর। এতটাই কঠোর যে তা অনেক সময়ই বিজ্ঞানসম্মত দেহধর্মের বিপরীতে যায়। বুদ্ধ সহজাত দেহ ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। তাই তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করার কথা বলেছেন। মধ্যম পন্থা কী? এককথায় দেহধর্মকে বোঝা, উপলব্ধি করতে পারা এবং স্বীকার পূর্বক যথাসম্ভব ধীরে ধীরে সংযমতার চর্চা করা। এখন আপনার প্রশ্ন হতে পারে দেহধর্ম কী? সহজ কথায় এই দেহ খাঁচা সুষ্ঠভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা যা প্রয়োজন সেই অতিপ্রয়োজনীয় চাহিদাই দেহধর্ম।[দেহধর্মকে কেন্দ্র করে আমাদের এখানকার ভারতীয় উপমহাদেশে বহু দেহতত্ত্ববাদী দর্শনের বিকাশ হয়েছে। বাউল দর্শন তার মধ্যে অন্যতম।আপনাদের জানার ইচ্ছা থাকলে বাউল দর্শন নিয়ে পড়তে পারেন।] একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু আপনার আমার মতই মানুষ। মাথা ন্যাড়া করেছেন আর গায়ে গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করেছেন মানে এই না যে তিনি ওইসব বেশ ধারণ করার সাথে সাথেই আসক্তিমুক্ত অরহত হয়েছেন। তবে হ্যাঁ তিনি সাধারণ গৃহী জীবনের চেয়ে একটু উচ্চ স্তরে অবস্থান করেন এই অর্থে যে, তিনি সংসার ধর্ম থেকে দূরে থেকে বোধিচিত্ত চর্চাকে পেশা, ধ্যান, জ্ঞান করে সাধারণ গৃহীর তুলনায় যথেষ্ট চর্চা করার সময় পান কিছু সুনির্দিষ্ট প্রটোকলের মধ্যে জীবন যাপন করার মাধ্যমে যা গৃহীদের সম্ভব হয় না।
কিন্তু দেহধর্ম সাধারণ দায়কের মত তাকেও তাড়িত করে। তাই বিচ্যুত হওয়ারও সম্ভাবনাও থাকে তার। ত্রিপিটকের গ্রন্থগুলোকে এমন উদাহরণ বহু আছে যেখানে মহাস্থবীর বৃদ্ধ ভিক্ষুরাও বিচ্যুত হয়েছেন দেহধর্ম বা রিপুর তাড়নায়। এমনকি গৌতম বুদ্ধ অতীত জন্মে বোধিসত্ত্ব অবস্থায় সংযমী সাধক সন্ন্যসী হয়েও এক রাণীর সাথে ব্যাভিসারে লিপ্ত হয়েছিলেন। [আরও জানার জন্য বিপ্রদাস বড়ুয়ার লেখা- ”বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রেম” বইটি পড়তে পারেন।]
কিন্তু দেহধর্ম সাধারণ দায়কের মত তাকেও তাড়িত করে। তাই বিচ্যুত হওয়ারও সম্ভাবনাও থাকে তার। ত্রিপিটকের গ্রন্থগুলোকে এমন উদাহরণ বহু আছে যেখানে মহাস্থবীর বৃদ্ধ ভিক্ষুরাও বিচ্যুত হয়েছেন দেহধর্ম বা রিপুর তাড়নায়। এমনকি গৌতম বুদ্ধ অতীত জন্মে বোধিসত্ত্ব অবস্থায় সংযমী সাধক সন্ন্যসী হয়েও এক রাণীর সাথে ব্যাভিসারে লিপ্ত হয়েছিলেন। [আরও জানার জন্য বিপ্রদাস বড়ুয়ার লেখা- ”বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রেম” বইটি পড়তে পারেন।]
’কাম’ শব্দটিকে পন্ডিতরা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ’Sensual Pleasure’ হিসেবে। অর্থাৎ ইন্দ্রিয় বিষয় বাসনা হিসেবে। সে অর্থে কাম বলতে কেবলমা্ত্র যৌনমিলনাকাঙ্খাকে বুঝায় না। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক এবং মানসিক আকাঙ্খাকা, আসক্তিকেও বুঝানো হয়। এই আকাঙ্খাকে আবার অস্বীকারও করা যায় না। যেমন- ক্ষুদা। এটাও তৃষ্ণা বা ইন্দ্রিয় বাসনার মধ্যে পড়ে। তাই বলে কি আপনি না খেয়ে থাকবেন? সম্ভব না। সম্ভব না বলেই সিদ্ধার্থ গৌতম দেহধর্মকে বুঝে সুজাতার পায়েস গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে যারা সংযমতার অর্থ কৃচ্ছসাধনকে মনে করেন তাদের মতই বুদ্ধের পাঁচজন ধ্যান সঙ্গী(যাঁরা পরে বুদ্ধের শিষ্য হন) বুদ্ধকে ভুল বুঝে ত্যাগ করেন। বর্তমানে সাধারণ বৌদ্ধরা মনে করেন ভিক্ষু মানেই বিকালে ভাত খায় না। বিকালে ভাত খেলেই তিনি আর ভিক্ষু না। ধর্মপদ বইয়ের সুখবর্গ অংশের ৭ নাম্বার গাথায় লেখা আছে- ”জিঘচ্ছা পরমা রোগা....” অর্থাৎ ক্ষুদা কঠিনতম রোগ। আর ”কুমার প্রশ্ন” সুত্রে উল্লেখ আছে- ”সব্বে সত্তা আহরত্তিকা..” অর্থাৎ সকল সত্ত্বগণ আহারের অধীন। আধুনিক বিজ্ঞানও বলছে দেহের প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ না করলে বা অনিয়িমত গ্রহণ করলে পেটে অতিরিক্ত এসিডিক হওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক হয়। অর্থাৎ সংযমতার নামে যখন এই দেহধর্মকে অস্বীকার করে এর বিপরীতে চলা হয় তখন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।একারণে অধিকাংশ ভান্তে গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় ভোগেন এই মধ্যপন্থাকে না বুঝে।
আমাদের দেহটা যে সুনির্দিষ্ট সিস্টেমে চলে তাকে আধুনিক বিজ্ঞান বলছে Circadian rhythm বা দেহঘড়ি। এই দেহঘড়িকে যদি মেশিন হিসেবে কল্পনা করা হয় তাহলে তার জ্বালানি চাহিদাকে বলা যায় কাম। মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড ইন্দ্রিয় বাসনার উপর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে লিখেছেন ছয় মাসের শিশুও হস্তমৈথুন করে! অর্থাৎ নবজাতক ছোট্ট শিশুটিরও রয়েছে কাম বাসনা। আপনার এতক্ষণে চোখ হয়ত কপালে উঠেছে। এ কিভাবে সম্ভব! তবে কি ওই শিশু তার লিঙ্গে হাত দিয়ে সেটা করেন? উত্তর হচ্ছে না। শিশুটি যখন হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় বা খোলা রেখে মুখে পুড়ে দিয়ে শব্দ করেন তাতে তার একধরণের পুলকবোধ হয়। সেটাই তার ইন্দ্রিয় বাসনার চরিতার্থ করা। এমনকি মায়ের দুধ পান করার সময় একটা স্তন মুখে নিয়ে বাকি আরেকটি স্তন হাত দিয়ে মর্দন করেন তাতেও তার সেই পুলকবোধ হয়। এই পুলকবোধ শিশুটির মস্তিষ্কে নিউরণে ইতিবাচক কাজ করে এবং তার চিন্তা শাক্তির বিকাশে সহায়ক হয়।
পাশ্চাত্য যৌনবিজ্ঞানীরা বলেন পরিমিত যৌনতা দেহমনের সুস্থতা ও সুস্বাথ্যের জন্য প্রয়োজন। অতিস্টিক রোগীসহ বিভিন্ন মানসিক রোগীর চিকিৎসায় মনোচিকিৎসকরা রোগীকে প্রয়োজনে বারবণিতার সাথেও সঙ্গম করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন অভিভাবকদের। এতে রোগীরা সুস্থবোধ করেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। একজন ভিক্ষুর ক্ষেত্রে দেখা যায় একদিকে অতিমাত্রায় হাই প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং সে খাবারের শারীরিক প্রতিক্রিয়া অন্যদিকে কঠোর বিধি নিষেধের বেড়াজাল- এই দুইটা বিপরীত বিষয় প্রবল মানসিক অবসেসনে ভুগার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এ তো গেল আহার আর মৈথুন বিষয়ে অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এরকম অসংখ্য অপরিহার্য ইন্দ্রিয় বিষয় বাসনা রয়েছে যেগুলোর আসলেই আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা দরকার। একই সাথে সংযমতার পুনসংজ্ঞায়িতকরণও প্রয়োজন।মোট কথা ধর্ম চর্চাটা এই দেহাটাকে কেন্দ্র করেই, দেহটাকে অস্বীকার করে নয়। কাজেই দেহ ধর্ম দর্শনটাও জানা জরুরী।
আমাদের ভান্তেরা অধিকাংশ সামাজিক প্রয়োজনে সামাজিক বিহারের ভান্তে। নিবৃতচারী আত্মচর্চার ভান্তে নেই বললেই চলে। সেরকম পরিবেশও আমাদের সমাজে নেই। বাংলাদেশে হয়ত তা কখনো সম্ভবও নয়। ভান্তেরা একদিকে দক্ষ গুরুর সান্নিধ্যে প্রশিক্ষণ পায় না অন্যদিকে আবার সামাজিক প্রয়োজনে তাদেরকে বিভিন্ন কাজ করতে হয়। তাদের আত্মচর্চার সুযোগ কোথায়? এই অনুষ্ঠানে আসেন তো ওই অনুষ্ঠানে যান- এই অবস্থা। এমন পিচ্ছিল পরিবেশে তাদের অবস্থান যেখানে পা পিছলে গিয়ে পড়ে যাওয়ার বিপদের হাতছানি প্রতি পদে পদে। এক্ষেত্রে পড়ে যাওয়া ভিক্ষুদের দোষ দিয়ে কি লাভ। পরিবেশ যত প্রতিকূল সেখানে পড়ে যাওয়া ভিক্ষুর সংখ্যাও তত বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। শেষে হুমায়ুন আজাদের একটি কথা বলে এই পর্বের লেখাটা শেষ করব- “সবসময় অপতিত থাকাই মহত্ব নয়, মহত্ব হচ্ছে পতনের মধ্যে থেকে উত্থান।”
Awhkhoda Jummo
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]