পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের মতো পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও সেখানকার অবহেলিত বাঙালি জনগোষ্ঠী চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের অতিদ্রুত পুনর্বাসন করা হচ্ছে। সাহায্যে এগিয়ে আসেছে সরকারি, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু বাঙালিরা একই ধরনের ক্ষতির শিকার হলে বছর পেরোলেও কারোর পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পাহাড়ের বাঙালিরা। জানা যায়, রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে ভস্মিভূত হওয়া রাঙামাটির বাঘাইছড়ির দুরছড়ি বাজার দীর্ঘ এক বছরে চালু হয়নি। সরকারসহ বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে ক্ষতিপূর্ণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা, যাদের অধিকাংশ বাঙালি। এখনও পুনর্বাসন হয়নি আগুনে বসতভিটে হারা সেখানকার পরিবারগুলো। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে মানবাতর দিন কাটছে এসব পরিবার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
অগ্নিকাণ্ডের পর নতুন করে চালু হয়নি বাজার। হাট না বসায় চরম দুর্ভোগে স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসায়ীরা। একটা সময় পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ীদের পদভারে যে এলাকা মুখরিত থাকতো, সে বাজার এখন বিরাণ। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ২০ অক্টোবর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের দুরছড়ি বাজারে। আগুনে পুড়ে যায় ২৫০টি দোকান ও বাজারের আশপাশর কমপক্ষে ১০০টি পরিবারের বসতঘর। পুড়ে যায় খেদারমারা ইউপির কার্যালয় ও তথ্য সেবাকেন্দ্রও। সে সময় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসন ৩ মেট্রিক টন চাল ও জেলা পরিষদ ১ লাখ টাকা ও রেড ক্রিসেন্টের পর পক্ষ থেকে ১০০ জনকে দুই হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এপর ক্ষতিগ্রস্তদের খবর রাখেনি কেউ।
বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিটি দোকানের জন্য ৬ লাখ ৩৬ টাকা ধার্য্য করে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে একটি প্রাক্কলন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বাজার কমিটির সভাপতি মো. আবুল খায়ের জানান যে, আর্থিক অনুদানের বিষয়ে তারা (বাজার কমিটি) তিনবার জেলা প্রশাসকের স্মরণাপন্ন হলে তিনি এ বিষয়ে তার কিছু করার নেই বলে জানান।
এ অবস্থায় জেলা প্রশাসক বাজার কমিটিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সে মতে, গত ১৫ অক্টোবর বাজার কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব নববিক্রম ত্রিপুরার সঙ্গে দেখা করেন। সচিব তাদেরকে জানান, পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিষয়ক প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন।
বাঙালিরা অভিযোগ করেন, অন্যান্য এলাকার মতোই পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার এবং বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও থেকে যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। বিশেষ করে পাহাড়ি বা কোনো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ক্ষতির বিষয়ে ব্যাপক ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু বাঙালিরা একই ধরনের ভুক্তভোগী হলে বছরের পর বছর পেরোলেও তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
দুরছড়ি বাজারের ক্ষতিগ্রস্তরা উদাহরণ হিসেবে বলেন, সাম্প্রতিককালে পার্শ্ববর্তী লংগদু উপজেলায় ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকার, বিভিন্ন দাতাও এনজিও সংস্থা, ব্যক্তি, মানবাধিকার সংস্থা এবং সমতল/পাহাড়ি সংগঠনগুলি ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ ও নগদ অর্থ প্রদান করেছে, যা উপজেলা প্রশাসন নির্ধারণকৃত ক্ষতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এ পর্যন্ত গড়ে এক-একটি পরিবার লক্ষাধিক টাকা ত্রাণ পেয়েছে। এছাড়াও সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়ির জন্য ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যার নির্মাণ কাজ শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিভিন্ন মহলের দেয়া সাহায্য নিয়ে কোনো ক্ষোভ কিংবা ঈর্ষা নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে দুরছড়ি বাজারের দোকানপাট ছাড়াও ভাড়াটিয়াদের দোকানের বিপুল পরিমাণ মালামাল পুড়ে গেছে। এতে কোনো কোনো দোকানের ক্ষতির পরিমাণ ১৫/২০ লাখ টাকা হবে। কোনো পক্ষ থেকেই এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাহায্য সহযোগিতা/আর্থিক অনুদানের বিষয়টির অদ্যাবধি কোনো প্রকার অগ্রগতি হয়নি। ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দারুণ হতাশা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, পক্ষপাতিত্ব, একচোখানীতি তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করেছে বলে জানিয়েছেন।
বাজার কমিটির সভাপতি মো. আবুল খায়ের জানান, রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোন মামলা কিংবা তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রতিটি দোকানের জন্য ছয় লাখ ৩৬ টাকা ধার্য করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি প্রক্কলন পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা থেকে যায় কাগজে কলমে।
দুরছড়ি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল সালাম জানান, ২০১৬ সালে ৩০ জুলাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দূরছড়ি বাজার বয়কট করার পর তিন মাসের মাথায় বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আসলে রহস্যজনক। কারণ ১৯৬০ সাল হতে দূরছড়ি বাজার রহস্যজনকভাবে তিন চার বার পুড়ে যায়। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সে বিষয়ে কারো নজরদারি নেয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি-বেসরকারিভাবে কোনো ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি লংগদু অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ইউএনডিপিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে তাদের পূনর্বাসনও করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্গম এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর খবর রাখেনি কেউ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]