সোমবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৭

পাহাড়ে হঠাৎ বেপরোয়া উপজাতি জঙ্গি সংগঠনগুলো

খুন একজন, অপহরণ দুইজন, গুলিতে আহত করা হয়েছে একজনকে, অস্ত্রসহ আটক দুইজন, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক তিনজন। গত ৫ দিনে খাগড়াছড়ির চিত্র এটা। সব ঘটনার নেপথ্যে খাগড়াছড়িতে তৎপর থাকা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফএর সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা। গোয়েন্দারা মনে করছেন, পার্বত্য জেলাগুলোকে অশান্ত করার পাঁয়তারার অংশ হিসেবে হঠাৎ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সশস্ত্র গ্রুপগুলো। খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ তাদের নানান অপকর্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। পাহাড়ে ৩টি আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে শান্তিচুক্তির বিরোধিতাকারী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এ ব্যাপারে অন্যদের চাইতে খানিকটা বেশি বেপরোয়া। সংশ্লিষ্টরা জানান, গতকাল খাগড়াছড়ি জেলা শহরে লাইফ কেয়ার ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দুই নেতা অস্ত্রের মুখে অপহৃত হয়েছে। তারা হচ্ছেন- পিসিপি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা ও সহ-সভাপতি জুয়েল চাকমা। দুপুর পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন লারমা)-এর সন্ত্রাসীদের দায়ী করে বলেন, সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে দুটি মোটরসাইকেলে করে তাদের অপহরণ করে দীঘিনালা সড়কের দিকে নিয়ে যায়। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মো. আব্দুল হান্নান বলেন, অপহৃতদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে গত ১৮ই অক্টোবর খাগড়াছড়ি পানছড়িতে চাঁদাবাজি করতে আসা ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের নিজ বাড়িতে গোপনে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করায় প্রফুল্ল ত্রিপুরার ছেলে নিরীহ কৃষক জীবন ত্রিপুরা (৩২) কে গুলি করে গুরুতর আহত করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। এ সময় জীবন ত্রিপুরা হাতে ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলির শব্দে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর দেখে আহতের প্রায় ঘণ্টাখানেক পথ কাঁধে করে পাড়ি দিয়ে মরাটিলা নামক এলাকায় এসে সিএনজিযোগে রাত ১২টায় খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পৌঁছায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও তার অবস্থা গুরুতর দেখে রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদিকে ২০শে অক্টোবর চাঁদাবাজির এলাকা ভাগ এবং অন্যান্য আন্তঃ দলীয় কোন্দলের জের ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন) গ্রুপের নেতা সমায়ুন চাকমা (৪৫) কে কুপিয়ে হত্যা করে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা। 

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি ভুয়াছড়ির খ্রিষ্টান্ত পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। একই দিন অপর একটি ঘটনায় খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলায় ইউপিডিএফ’র চার চাঁদাবাজকে গণধোলাই দিয়ে আটক করে স্থানীয় জনতা। পরে তাদের জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আটকৃতরা হলো- খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ভাইবোনছড়া ইউপি’র ছোটরায় টেইসাপাড়া’র বাসিন্দা খেদারাম ত্রিপুরার ছেলে বৌদ্ধরাম ত্রিপুরা (২৯), পানছড়ি উপজেলা’র বৌদ্ধরামপাড়া’র মবুক চাকমার ছেলে বিমল চাকমা (২৪), সুকমনি চাকমার ছেলে সুমন চাকমা (২০) এবং পানছড়ি উপজেলা’র দক্ষিণ নালকাটা’র শান্তি দুলাল চাকমা’র ছেলে মুকতাহার দেওয়ান চাকমা। গোয়েন্দারা জানান, ইউপিডিএফ’র হয়ে তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি আর অত্যাচারের কারণে সাধারণ এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের কাছে অস্ত্র আছে বলে স্বীকার করে। পরে আটককৃতদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ইউপিডিএফ’র গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আমেরিকার তৈরি ১টি পিস্তল ১টি ম্যাগাজিন ও ২ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। এ ছাড়াও গতকাল খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় অস্ত্রসহ ইউপিডিএফ’র দুই কর্মীকে আটক করে যৌথ বাহিনী। রাত আড়াইটার সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল উপজেলার বড়াদম এলাকার হেডম্যান পাড়া গ্রামের রুনা চাকমার বাড়ি থেকে আটক করে তাদের। আটককৃতরা হলো- ইউপিডিএফ’র জনসংযোগ শাখার প্রধান রমেশ চাকমা (৬০)। 

তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইছড়ি মুখ এলাকার মৃত মঙ্গল চন্দ্র চাকমা’র ছেলে এবং অন্যজন হলেন রমেশ চাকমার ব্যক্তিগত সহকারী অমর চাকমা (৫৮)। তিনি দীঘিনালা উপজেলার বৌদ্ধপাড়া গ্রামের বিভূতিভূষণ চাকমা’র ছেলে। এ সময় তাদের সঙ্গে থাকা একটি ইতালির তৈরি ব্যারোটো পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড গুলি ও তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পার্বত্য জেলাগুলোতে কাজ করা গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা শুধু হত্যা বা চাঁদা আদায় করেই ক্ষান্ত নেই। এরা পাহাড়ে ভয়াবহ রকমের নারী নির্যাতনও চালাচ্ছে। পাহাড়ি মেয়েরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করলে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করে এসব মেয়েকে ধরে নিয়ে নিজেরাই শাস্তির নামে গণধর্ষণ করছে। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপরও চালায় ভয়াবহ নির্যাতন। পাহাড়ের নারী অধিকার সংগঠনগুলোকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। 

এ ছাড়াও পাহাড়ের শান্তি বিনষ্টকারী ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে নামে-বেনামে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি খুলে সরকার, সেনাবাহিনী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের নিয়ে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রচার করছে। তাদের এই মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্টের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামপ্রদায়িক হামলার মতো ঘটনাও ঘটছে। গত ১১ই সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ পরিচালিত ‘সিএইচটি জুম্মল্যান্ড’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে এরকম একটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়ানো হয়। যেখানে লেখা ছিলো- “(খাগড়াছড়ির) গুইমারার জালিয়াপাড়ায় পাহাড়ি-বাঙ্গালি সংঘর্ষ চলছে, সেনাবাহিনি প্রতিহত করছে, যারা গাড়িতে যাতায়াত করেন সাবধানে করবেন”। এমন গুজব প্রচারের পরদিনই ওই এলাকায় রবিউল নামে এক বাঙালি মোটরসাইকেল চালকের লাশ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও, গত ৩০শে জুন খাগড়াছড়ির রামগড়ের সোনাইআগা নামক এলাকায় একদল ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের ঘটনা নিয়েও ফেসবুকে জঘন্য মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালায় তারা। যা পরে পাহাড়ি-বাঙালি সামপ্রদায়িক হামলায় রূপ নিতে যাচ্ছিলো। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের ত্বরিত কর্মতৎপরতার কারণে বড় ধরনের দাঙ্গা এড়ানো সম্ভব হয়।

কাজী সোহাগ 


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]