বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৭

পাহাড়ে বিলুপ্তপ্রায় পাংখু উপজাতি! চাকমাদের দখলে পাংখুদের ভুমি

রাঙ্গামাটি জেলার দূরবর্তী উপজেলা বাঘাইছড়ি। এটি শুধু প্রত্যন্ত এলাকাইন নয় দেশের অবহেলিত অঞ্চলও। এখানে বসবাসরত মূল অধিবাসীরা হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাংখু সম্প্রদায়। বাঘাইছড়ির ৩৬নং সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এল. থাংয়া পাংখু একবার ঢাকায় এসে তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাদের এলাকাটি এতই অবহেলিত যে, ঢাকার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথেও তাদের যোগাযোগ প্রায়শই থাকে না। বাঘাইছড়ি উপজেলাটি রাঙ্গামাটি জেলাধীন হলেও নিরাপত্তার জন্য এটি খাগড়াছড়ি জেলার নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া সড়ক যোগাযোগের জন্য এটি খাগড়াছড়ি দীঘিনালা বাঘাইছড়ি সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। নৌপথে রাঙ্গামাটির সঙ্গে লংগদু হয়ে বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। তবে বাঘাইছড়ির আদি বাসিন্দা পাংখু জনগোষ্ঠী আজ বিলুপ্তির প্রায় শেষ পর্যায়ে। পাংখুরা কেউ কেউ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত, ওরা পাংখু ভাষায় কথা বলে।
কিছু কিছু ভাঙ্গা ইংরেজিও বলে। তাছাড়া শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যেও পাংখুরা পিছিয়ে আছে। তাদের আচার-আচরণ সামাজিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক হালচাল এখন আর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সীমাবদ্ধ নেই। গত কয়েক দশক যাবত বাঘাইছড়িতে সমানে বহিরাগত চাকমা ও ত্রিপুরাদের আধিপত্য চলে আসছে। এল থাংয়া পাংখু এখন আর ইউপি চেয়ারম্যান নেই। সেক্ষেত্রে সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান হলেন অতুলাল চাকমা। পাংখুরা এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় সাজেক ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান পদেও চাকমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় নির্বাচিত হয়। পাংখুরা চাকমা ভাষা বোঝে না, লেখাপড়ায়ও তারা বহুদূর পিছিয়ে আছে। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সুজিত মিত্র চাকমা। সাজেক ইউনিয়নে মোট ৯টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তন্মধ্যে, শুধু বাঘাইহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু আছে। বাকি ৮টা স্কুলে শিক্ষকরা ক্লাস করেন না। স্কুলগুলো এমনই দূরে দূরে যে, এক-দু’দিন হেঁটে যেতে হয়। এজন্য মনিটরিং করার মতো কর্মকর্তাও পাওয়া যায় না। সাজেক প্রায় ১ হাজার পাংখু শিশু কিশোরের লেখাপড়া চরম হুমকির মুখে, অশিক্ষিত হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্ম।

এমনিতেই অর্থনৈতিক চরম সঙ্কট, মাঝে মাঝে শুরু হয় ইঁদুর বন্যা। তখন বাঘাইছড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে চরম খাদ্যাভাবে থাকতে হয়। বাঘাইছড়ির বন্ধ থাকা বিদ্যালয়গুলো হলো (১) নিউলংকর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (২) ব্যটিলিং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩) তুইছুই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৪) শিয়ালদাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৫) কংলাক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৬) রুইলুই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭) লংকর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮) ছয়নালছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব স্কুলে শিক্ষক আছে ২১ জন, শিক্ষার্থী আছে ৬৯৪ জন।

আমরা বাঘাইছড়ির পাংখু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও শিক্ষাদীক্ষা নিয়ে সবিশেষ উদ্বেগের মধ্যে আছি। পাংখুরা এলাকায় নিজেরাই এখন আর কোন বিষয়ে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব খাটাতে পারছে না। অতীতে উপজাতীয় নেতারা পাহাড়ে বাঙালী জনগোষ্ঠীকে বহিরাগত, অনুপ্রবেশকারী, সেটেলার ইত্যাদি বিশেষণে জাহির করলেও বাঘাইছড়ি ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো ঘটেছে। এখানে চাকমারাই অনুপ্রবেশকারী এবং বহিরাগত ভূমি দখলকারী হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

বাঘাইছড়ির সাজেকে পাংখুদের ভূমি জবরদখল করছে চাকমা ও ত্রিপুরারা। তারা পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে সাজেকে এসে বসতি স্থাপন করে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে এলাকার যাবতীয় বিষয়ে আধিপত্য লাভ করেছে। এটি পাংখু জনগোষ্ঠীর জন্য বিরাট এক অশনিসঙ্কেত, তাজিসত্তা হুমকির মুখে। পাংখুদের ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমরা চাই স্থানীয় পাংখু নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক। যোগ্যতা ও পরীক্ষায় তারা চাকমাদের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়াতে পাংখু বেকার যুবকরা চাকরিও পাচ্ছে না। দেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা প্রকৃতির অফুরন্ত সম্পদে ভরপুর বাঘাইছড়ি। এখানকার আদি বাসিন্দা পাংখু জনগোষ্ঠীর বিকাশ ও প্রকাশে সরকার এগিয়ে আসবেন এটাই আমাদের একান্ত কামনা। 

লেখক :শায়লা জেসমিন হেলেন, সভানেত্রী সমঅধিকার নারী আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম।


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]