ধর্ষণের শিকার হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের (সিএইচটিডিবি) এক চাকমা নারী কর্মচারী প্রেগনেট (গর্ভবতি) হয়ে যায়। পরে আলোচনা করে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়েছে। এই চাকমা নারী কর্মচারী বিষয়টি অভিযোগে লিখিতভাবে না আনলেও বিভিন্নভাবে জানাগেছে বলে জানান সিএইচটিডিবি‘র তথ্য কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য ফাওজিয়া আনোয়ার। সিএইচটিডিবি‘র উপহসকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চাকমা নারীর ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ‘কথা বলেন। ফাওজিয়া বলেন, এই চাকমা নারী তিন বারের ধর্ষনের চিত্র তুলে ধরেছেন সিএইচটিডিবি বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিকট। উপসহকারী প্রকৌশলী মিহির কুমার চাকমা বিভিন্ন সময় সুযোগ পেলেই তাকে জড়িয়ে ধরতো ও সব সময় অশোভন অঙ্গভঙ্গি ছিল বলে তদন্ত কমিটিকে জানায়। পুরো বক্তব্য রেকর্ড আকারে লিখিত ও সিডি আকারে বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। তবে থানায় বা আদালতে না গিয়ে সরাসরি সিএইচটিডিবি বোর্ডের নিকট ধর্ষণের বিচার চাওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে দাবী করেন সিএইচটিডিবি‘র তথ্য কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য ফাওজিয়া।
ধর্ষণের এই স্পর্শকাতর ঘটনায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য চাওয়া হয়নি কেন ? জানতে চাইলে তথ্য কর্মকর্তা ফাওজিয়া বলেন, এটা বোর্ডের দায়িত্বনা। সে থানায় না গিয়ে বোর্ডে এসছে কেন? আর ঘটনার এতদিন পর কেন বিচার চায়! ফাওজিয়া বলেন বোর্ড বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে ব্যস্ত। ধর্ষণের মত ছোট-খাট বিষয়ের বিচার-আচারে সময় নষ্ট করার মানে হয়না।
সিএইচটিডিবি বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, সিএইচটিডিবি‘র উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিহির কুমার চাকমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন প্রতিষ্ঠানটির পরিছন্নকর্মী এক চাকমা নারী। ধর্ষণের বিচার চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেযারম্যান বরাবরে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে সিএইচটিডিবি‘র সহকারী সচিব রিদুয়ানুল হককে আহবায়ক, বাজেট ও অডিট অফিসার মো: নুরুজ্জামান এবং তথ্য কর্মকর্তা ফাওজিয়া আনোয়ারকে সদস্য করে তিনজনকে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
বোর্ডে দায়েরকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ধর্ষণের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি বোর্ডের ঝাড়–দার বিজয়কুমার মালি, রতন কুমার মালি, অনিয়মিত শ্রমিক আনচার আলী, গার্ড/মালি নাছির উদ্দিন, অফিস তত্বাবধায়ক উস্যাংমা চৌধুরী, উপসহকারী প্রকৌশলী খোরশেদ আলম ও সহকারী প্রকৌশলী প্রল্লব কুমার চাকমার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তবে ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্যি মিলেনি।
এই বিষয়ে সিএইচটিডিবির অফিস তত্বাবধায়ক উস্যাংমা চৌধুরীর নিকট জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন, ও (ভিকটিম চাকমা নারী কর্মচারী) আমার মেয়ের মত। সে আমাকে খালা বলেই সম্বোধন করে। মেয়েটি একদিন কান্না করে করে যখন আমাকে জানিয়েছে। আমি তখন তাকে পরামর্শ দিয়েছি, সকালে যখন অফিসে আসতেই হয়! আসার সময় তার ছোট ছেলে অথবা মেয়েকে সাথে নিয়ে আসার জন্য। অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যতক্ষণ না অফিসে আসে, ততক্ষণ যাতে ওরা তার সাথেই থাকে। এতে কেউ তাকে আর খারাপ কিছু করার সাহস পাবে না। এই কথাটি আমি তদন্ত কমিটিকে বলেছি।
অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী খুজে না পাওয়ায় ধর্ষণের সত্যতা মিলেনি বলে উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি। তবে ধর্ষণের কোনো অভিযোগ উঠার সাথে সাথে ভিকটিমকে পুলিশের নিরাপত্তায় সরাসরি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন ও ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি এই নারী কর্মচারীর ধর্ষনের ঘটনায়। জানানো হয়নি কোনো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে। ভিকটিমকে ডাক্তারী পরীক্ষা না করেও ডাক্তারী পরীক্ষায় ধর্সণের প্রমান মিলেনি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
ধর্ষিতার “ডাক্তারী পরীক্ষা, ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ ও আদালতে ক্যামরা ট্রায়াল না করে নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়ায় “ধর্ষণ ঘটেনি” বলা যাবে কিনা ? এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি লীগ্যাল ফার্ম “এডভোকেট রয় এন্ড এসোসিয়েট” এর আইন কর্মকর্তা এডভোকেট প্রতিম রায় বলেন, ধর্ষনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধর্ষিতাকে যদি মেডিক্যালে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিত হয়ে ধর্ষিতাকে গোসল করানো হয়, তা হলে ধর্ষণের আলামত পাওয়াটা ডিফিক্যাল। এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের সমস্ত আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দক্ষ পুলিশ অফিসার দ্বারা তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। ধর্ষনের কোনো অভিযোগ (মামলা) কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কর্মচারী নীতিমালা দ্বারা তদন্ত করে নিষ্পত্তি করতে পারে কিনা ? এমন প্রশ্নের জবাবে এডভোকেট প্রতিম রায় বলেন, এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।
একইভাবে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের নারী আইনজীবি ও মানবাধিকার নেত্রী টি. রওশণ আরা ঝরণা বলেন, ধর্ষণের ঘটনা কোনো ভাবেই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে, প্রত্যক্ষদর্শীদের মৌখিক স্বাক্ষ্য নিয়ে ধর্ষণ হয়নি বা প্রমান মিলেনি বলা যাবে না। কারণ এটা ধর্ষণের মত স্পর্শকাতর মামলার বিষয়। ভিকটিমকে পুলিশের নিরাপত্তায় ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন, পুলিশের হাতে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করাটা বাধ্যতা মূলক। মামলা দায়ের এবং আদালতে ভিকটিমের ক্যামরা ট্রায়াল, এর পরেই বলা যাবে ধর্ষণ হয়েছে কী- হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মৌখিক স্বাক্ষি নিয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এটা আরেক ফৌজদারী অপরাধ। মনে রাখতে হবে, ধর্ষণতো কেউ দেখিয়ে বা স্বাক্ষ্যি রেখে করে না। এতে প্রত্যক্ষদর্শী পাবে কোথায় ?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাঙামাটি কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সত্যজিৎ বড়–য়া বলেন, ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠান কোন এখতিয়ারে তদন্ত কমিটি গঠন করে মামলা নিষ্পত্তি করেছে আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এই মুহুর্তে আমি এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না, যেহেতু ভিকটিমকে যখন থানায় বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকট পাঠানো হয়নি।
ওসি আরো বলেন, ডাক্তারী পরীক্ষা, ধর্ষণের আলামত সংগ্রহসহ অনেকগুলো কাজ রয়েছে, যে কাজগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিরাপত্তা বেষ্টিনীর মধ্যেই হয়ে থাকে। এখানে কতটুকু এসব সম্পন্ন করা হয়েছে, আমার জানানেই। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব একটা নীতিমালা থাকতেই পারে। তবে ধর্ষণ জাতীয় ঘটনা প্যানেল কোর্টের মামলা (ফৌজদারী মামলা) এ জাতীয় মামলা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নীতিমালা দ্বারা নিষ্পত্তি করতে পারে কিনা আমি বলতে পারবো না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক সহকারী সচিব ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক রিদুয়ানুল হক‘র নিকট জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যা পেয়েছি তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরেছি। এছাড়া সব কিছুর অডিও রেকর্ড বোর্ডের নিকট জমা দেয়া হয়েছে। সামাজিক বাধ্যবাধকা এখানে কাজ করছে।
সিএইচটিডিবির চেয়ারম্যানকে এই চাকমা নারী কর্মচারীর লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সিএইচটিডিবির ছোট্ট একটি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিন অফিসে পৌছার আগেই দায়িত্বপালনে আসতে হয় আমাকে। তিনতলা ভবনে অফিসের প্রতিটি কক্ষ ও ফ্লোর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করি এ সময়ে। আর এই সুযোগে কাজের বাহানায় অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিহির কুমার চাকমা। পরে কড়াভাষায় শাসিয়ে দেয়, কাউকে বললে চাকরিচ্যুত করা হবে বোর্ডর চেয়ারম্যানকে বলে। এর পর প্রতি দু‘এক দিন পর পরই ধর্ষণ করে আসছে। দীর্ঘ দু‘বছর ধরেই চলে এই ধর্ষণ। এই ঘটনাটি আমি বোর্ডের অফিস তত্বাবধায়ক উস্যাংমা চৌধুরীকে জানিয়েছি।
কান্না জড়িক কন্ঠে অভিযোগকারি চাকমা নারী কর্মচারী এই প্রতিবেদককে জানান, প্রথম পর্যায়ে লোকলজ্জা আর ভয়ে ধর্ষিত হয়েও ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে পারছিলামনা ছোট চাকরিটি চলে যাওয়ার ভয়ে। এক দিকে বেকার স্বামীর কোন কর্ম নেই, অপর দিকে ছেলে-মেয়ের আহার ও পড়ালেখার খরচ। তাই মাটির দিকে তাকিয়ে নিরবে কেঁদে যাচ্ছিলাম। কিন্তু নিত্যদিনকার অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে নিরবতা ভেঙে এক পর্যায়ে ভাইস-চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এই অভিযোগের বছরকাল অতিবাহিত হতে যাচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে সিএইচটিডিবির উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মিহির কুমার চাকমার বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে ফোনকল করা হয়েছে একাধিকবার। তবে একবারই ফোনকল রিসিভ করেন মিহির কুমার চাকমা। পরিচয় দিয়ে এ সময় ধর্ষনের ঘটনায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। বোর্ড থেকে জেনে নিন! এই কথা বলেই বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এই বিষয়ে জানতে সিএইচটিডিবি‘র ভাইস চেয়ারম্যান তরুণ কান্তি ঘোষ‘র মুঠোফোনে একাধিকবার ফোনকল করা হয়। তবে রিংটোন বাজলেও তিনি কল না ধরায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]