সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

পাহাড়ি-বাঙালী সবাই উপজাতি ৪ দলকে চাঁদা দিতে বাধ্য

পার্বত্যাঞ্চলের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষ সরকারকে ট্যাক্স না দিলেও আঞ্চলিক দুটি রাজনৈতিক সংগঠনের চারটি গ্রুপকে নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য  হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । পার্বত্য বাঙালীদের বেলায়ও একই অবস্থা। সংগঠনগুলো হচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ (প্রসিত) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি-জেএসএস (সন্তু লারমা) ও জেএসএস (এমএন লারমা)। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কলা, মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করলেও সেখান থেকে চাঁদা আদায় করছে গ্রুপগুলো। প্রকাশ্যে এবং চিঠি দিয়ে চাকরিজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একটি সূত্র জানায়, বাস প্রতি বছরে জেএসএসের দুই গ্রুপকে পাঁচ হাজার করে টাকা এবং ইউপিডিএফকে তিন হাজার করে টাকা চাঁদা দিতে হয়। ট্রাক প্রতি তিন গ্রুপকে ছয় হাজার করে টাকা দিতে হয়। এ ছাড়া চাঁদের গাড়িকে (জিপ) তিনটি গ্রুপকে যথাক্রমে তিন হাজার, দুই হাজার ও দেড় হাজার করে টাকা দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি সেক্টর থেকেই চাঁদা নিচ্ছে পাহাড়ি দুই সংগঠনের চারটি গ্রুপ।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের গ্রুপ চারটির নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তিন জেলার সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালিরা। অথচ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া তো দূরের কথা, উচ্চস্বরে কথা পর্যন্ত বলতে পারেন না কেউ। এমনকি স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও পাহাড়ি এসব সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে অসহায় বলে জানা যায়।

নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ মাঝে মধ্যে চাঁদাবাজদের আটক করলেও চাঁদাবাজি থামছে না। নিত্যনতুন উপায়ে অত্যন্ত কঠোরতার সঙ্গে এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা না দিলে তাদের প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী চাঁদার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে স্বীকারও করেন না। কারণ দুর্গম এলাকা হওয়ায় পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনীর পক্ষে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছা সম্ভব হয় না।

নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, তিন পার্বত্য জেলায় জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার) ও ইউপিডিএফ ধার্যকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই শুরু হয় অপহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও যানবাহন। নাকের ডগায় বসে অনেকটা ফ্রিস্টাইলে এই চাঁদাবাজি চললেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রয়েছে জেএসএস ও ইউপিডিএফের পাঁচ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কর্মী। আদায়কৃত চাঁদা থেকেই দলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, চাঁদাবাজি পার্বত্যাঞ্চলে একটি স্বীকৃত বিষয়। সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স না দিলেও বাধ্যতামূলকভাবে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করতে হয়।

ভুক্তভোগী বাঙালি ও নৃ-জনগোষ্ঠীর কয়েকজন অভিযোগ করেন, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, গাছের ফল, ক্ষেতের ফসল, ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কৃষক-শ্রমিক-মৎস্যজীবী, সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, স্থানীয় উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত পরিবার, দেশীয় ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, জমি কেনাবেচা, এমনকি ডিম বিক্রি করতে গেলেও চাঁদা দিতে হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালের সরকার ও জেএসএস-এর (সন্তু লারমা) মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ শর্তই বাস্তবায়ন করেছে সরকার। কিন্তু এখনো এ চুক্তি বাস্তবায়নের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় ও আধিপত্য বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা/ফোরামের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রচার-প্রপাগা-া চালাচ্ছে চুক্তির পক্ষের-বিপক্ষের পাহাড়ি সংগঠনগুলো।

আবুল হোসেন নামে খাগড়াছড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, আঞ্চলিক দলগুলোর চাঁদাবাজি অহরহ ঘটছে। চাঁদাবাজিতে তারা কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। কোনো পরিবহন মাল নিয়ে খাগড়াছড়ি ঢোকার সময় অথবা বের হওয়ার সময় চাঁদা দিতে হয়। একেক সময় তারা একেক স্থান থেকে চাঁদা তোলে। চাঁদা না দিলে গাড়ি থামিয়ে স্টাফদের মারধর করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম সালাউদ্দিন বলেন, পার্বত্য এলাকা দুর্গম এবং সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। মাঝে মাঝে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয় এবং ধরাও পড়ে। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে এবং গ্রেপ্তার করে।

জেএসএস (সন্তু লারমা) গ্রুপের সহ-প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা চাঁদাবাজি করি না। পাহাড়িদের কল্যাণে কাজ করি। জেএসএস-এর নামে অন্য কেউ হয়তো চাঁদাবাজি করছে।

ইউপিডিএফ (প্রসিত খিসা) গ্রুপের সংগঠক নিরন চাকমাও চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। মানুষের সহযোগিতায় তাদের দল পরিচালিত হয় বলে জানান তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, চাঁদাবাজি এখানে ওপেন সিক্রেট। তবে ভয়ে কেউ মামলা করছে না। সশস্ত্র গ্রুপগুলো চাঁদাবাজি, খুন ও অপহরণ করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা সকল পর্যায়ে চাঁদা আদায় করে থাকে। তাদের চাঁদাবাজির কারণে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ।
রফিকুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]