আমরা ২০ বছর যাবৎ পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধী আন্দোলন করছি। আমাদের দাবি "পার্বত্য কালো চুক্তি বাতিল কর, করতে হবে " আমরা মনে করি আমাদের এই দাবিটি অস্পষ্ট এবং যথাযথ দাবি নয়। দীর্ঘ ২০ বছরে আমাদের কাংঙ্খিত সফলতা অর্জন ব্যর্থ হওয়ার পেছনে প্রধান দায়ী হলো আমাদের এই দাবি।আমরা মনে করি আমাদের দাবি হওয়া উচিত "বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গনতান্ত্রিক উপায়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সকল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার সমুন্নত রেখে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সংশোধন করা হোক।" আর এটাই হলো যৌক্তিক দাবি। অনেকেই বলে থাকেন যে আমরা যদি শান্তি চুক্তি সম্পুর্ন বাতিল চাই তবে কিছু না কিছু একটাতো পাবো। অর্থাৎ ১০০% না হলেও ২০% তো পাবো। মূলতঃ আমাদের এই আশার মাঝে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। যেটা আমরা দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ পেয়ে আসছি। সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে ৪৮ টি বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। বাকী ধারাগুলোর মধ্যে ১৫ টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়ে অন্যগুলো চলমান। বর্তমান পার্বত্য পরিস্থিতির আলোকে বলা চলে আমাদের দেশের কথিত সুশিল মহলদের সাথে নিয়ে শন্তু লারমা যেভাবে সরকারকে হুমকি দিচ্ছে এবং সরকার বিশ্বের যে চাপ অনুভব করছে তাতে অচিরেই সরকার শান্তি চুক্তি পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হবে।
এই অবস্থায় আমরা যদি শান্তি চুক্তি বাতিল চাই, বাতিল চাই, বলে গলা ফাটিয়ে মরি কার্যত সুফল কিছুই আসবে না। এমনকি আমাদের এই দাবি পাহাড় ভেদ করে সমতলের মানুষের কাছেও পৌছাবে না।স্বভাবত দেশের আপামর মানুষ পার্বত্য উপজাতিদের প্রতি নমনীয়। তাই শান্তি চুক্তিকে তারা ভালো সৃষ্টিতে দেখে। তারা মনে করে এটা পার্বত্য উপজাতিদের ন্যায্য অধিকার। পাহাড়ের বাঙ্গালীরা সেখানে খুব ভালো আছে। কিন্তু, এই চুক্তিতে যে সমস্যা রয়েছে, রয়েছে অসাংবিধানিক, অগনতান্ত্রিক, বে-আইনী ধারা তা দেশের মানুষ জানে না। প্রথমত আমাদের দেশব্যাপী সেটাই জানাতে হবে, বোঝাতে হবে।
এখন আমরা যদি বলি "শান্তি চুক্তি কালো চুক্তি"। তবে সমতলের বৃহৎ একটি অংশ মনে করবে আমরা জামায়াত-শিবির, নতুবা বিএনপি। আমরা যদি দাবি করি "শান্তি চুক্তি বাতিল কর, করতে হবে" তখন কিন্তু রাষ্ট্রের চলমান স্রোত আমাদের দাবিকে পাত্তা দিবেনা। এমনকি আমাদের কথা শুনতেও চাইবে না। রাষ্ট্রের এখনো অনেক বিবেকবান দেশপ্রেমিক মানুষ রয়েছে যারা কিনা আমাদের যৌক্তিক দাবি এবং উপস্থাপনার অভাবে আমাদের প্রতি বিরুপ মনোভাব নিয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তির স্ব-পক্ষে রয়েছেন। তাছাড়া, এই চুক্তি দীর্ঘ এই সময়ে বাতিল কখনোই করা সম্ভব নয়। যারা মনে করেন চুক্তি বাতিল করা সম্ভব তারা নিতান্তই বোকার স্বর্গে বসবাস করেছেন। তাই চুক্তি বাতিলের দাবি নিয়ে আমাদের অগ্রসর হওয়া আমি মনে করি কান্ড জ্ঞানহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়।
অনেকেই বলে থাকেন বিএনপি সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধী। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এই চুক্তি অটোমেটিক্যালি বাতিল করে দিবে। সেই প্রক্রিয়াও করা আছে। তাদের বলবো ভাই, চুক্তি বাতিল এতোটাই কি সোজা? আপনাদের মনে রাখতে হবে চুক্তিটি তৎকালীন আওয়ামীলীগ করে থাকলেও সেটা কিন্তু রাষ্ট্রের সরকার করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় যখন দায়িত্ব্যে আসবে তখন বিএনপি, আওয়ামীলীগ উভয়ই এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী। সুতরাং রাষ্ট্রের এই চুক্তি বাতিল কিংবা অস্বীকার করবার ক্ষমতা নেই। তাছাড়া, মনে রাখতে হবে সদ্য চুক্তির বিরোধীতা করে ক্ষমতায় যাওয়া বিএনপি সরকারের আমলেই পাহাড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়েছিলো। সুতরাং পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে বিএনপি, আওয়ামীলীগ উভয় সরকারই সমান। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় গেলে চুক্তি বাতিল হবে এটা দুঃস্বপ্ন।
তবে হাঁ,, উপায় আমাদের একটাই। আমরা শান্তি চুক্তির বিরোধী নই। আমরাও চাই পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক, হোক চুক্তির বাস্তবায়ন। তবে অবশ্যই সেই চুক্তি যে চুক্তি বাংলাদেশ সংবিধান পরিপন্থি নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোন ধারা সংযুক্ত চুক্তি বাস্তবায়ন আমরা চাই না। বর্তমান পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে বেশ কিছু ধারা সংযুক্ত রয়েছে যা রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমত উপেক্ষিত, অগনতান্ত্রিক। এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে পার্বত্য আপামর জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই চুক্তি ধারা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে উঠবে বাংলাদেশের ভেতরে আরেকটি দেশ, যার নাম হবে উপজাতীয় সন্ত্রাসী কর্তৃক স্বায়ত্বশাষিত "জুম্মল্যান্ড"। সুতরাং এই চুক্তিতে রাষ্ট্র বিরোধী, সংবিধান পরিপন্থি যে সমস্ত ধারা সংযুক্ত আছে তা সংশোধন করা হোক। নিশ্চিত করা হোক পাহাড়ে বসবাসরত সকল সাম্প্রদায়ের সাংবিধানিক সম -অধিকার।
সেই মতে আমরা যদি অতি দ্রুত চুক্তিকে অকার্যকর করে পাহাড়ে সকল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে চাই তবে আমাদের জন্য সঠিক কাজ হলো আইনী প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়া। চুক্তিতে সংযুক্ত অসাংবিধানিক, অগনতান্ত্রিক ধারাগুলো বাছাই করে তার বিরুদ্ধে আইনী লড়াই করা। দিবস বিশেষ কালো চুক্তি বাতিল চাই, বাতিল চাই, বলে সভা সমাবেশ না করে আইনি প্রক্রিয়ায় আন্দোলন পরিচালনা করলে এতোদিন এই চুক্তি মায়ের ভোগে চলে যেতো। অথচ আমাদের চুক্তি বিরোধী এই সভা সমাবেশ বড় বড় পত্রিকাতো দূরের কথা আমাদের স্থানীয় আঞ্চলিক পত্রিকাতেও স্থান পায় না। একেতো আমাদের দাবিটা অবাস্তব, অযৌক্তিক অপরদিকে আমাদের কর্মসূচিগুলো পরিনত হয়েছে সংগঠনের পিকনিক উদযাপনের মতো। সুতরাং আমার লেখাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সবাই একটু ভেবে দেখবেন।
লেখক: আবু উবাইদা
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]