রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮

ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার নেপথ্যে

ইউপিডিএফের অন্তর্কোন্দলে খুন হয়েছেন মিঠুন চাকমা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যে তথ্য-উপাত্ত পৌঁছেছে তাতে এই বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। সরাসরি কারা খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সে ব্যাপারেও এখনো কোনো তথ্য নেই মামলার তদন্তকারীদের হাতে। এ দিকে মিঠুন হত্যায় ইউপিডিএফের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দুষে আসছে। এ দিকে ঘটনার তিনদিন পরেও থানায় কোনো মামলা হয়নি। খাগড়াছড়ির এসপি আলী আহম্মদ খান বলেছেন, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও মিঠুনের স্বজনেরা মামলা করছেন না। পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-প্রসিত) খাগাছড়ি জেলা সংগঠক মিঠুন চাকমাকে (৪০) দিনে দুপুরে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ৩ জানুয়ারি এই ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের দায় সদ্য গঠিত নতুন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিকের ওপর চাপিয়ে আসছে প্রসিত গ্রুপের নেতারা। তবে ঘটনার তিন দিন পর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক। পাশাপাশি হত্যার নেপথ্যের কারণও তুলে ধরেছে দলটি।  ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমা হত্যার সাথে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পার্টি কোনোভাবেই জড়িত নয়। গতকাল শুক্রবার ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক পার্টির মিডিয়া সমন্বয়ক মিটন চাকমা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি করেছেন। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফ প্রসিত দলের আন্তঃকলহে নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইউপিডিএফ (প্রসিত) দলের নেতা মিঠুন চাকমা নিহত হওয়ার ব্যাপারে ইউপিডিএফ (প্রসিত পন্থীর) নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা সম্পূর্ণ আবেগী ভাষায় বস্তুনিষ্ঠ, তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই তাদের মনগড়া মন্তব্য, বক্তব্য, ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করে নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির ওপর দায় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’


ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) বলেছে, ‘আমরা সবাই ইউপিডিএফ প্রসিত দলে সম্পৃক্ত ছিলাম। মতাদর্শ মিল না হওয়ার কারণে জুম্ম জাতীয় স্বার্থে এবং সচেতন জুম্ম জনগণের পরামর্শে ও অনুপ্রেরণায় নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছি। তাই মিঠুন চাকমা নিহত হওয়ার ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য না করে আমাদের পার্টি ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিল। পর্যবেক্ষণে থেকে যেটা পাওয়া গেছে সেটা হলো, মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফ-প্রসীত দলের আন্তঃকলহে নিহত হয়েছেন। এতে নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টি কোনো মতে জড়িত নয়।’ 
মিঠুন চাকমাকে হত্যার নেপথ্যের ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘নিহত মিঠন চাকমা ইউপিডিএফ প্রসিত দলের কোনো নেতাকে সমালোচনা থেকে বাদ দিতেন না এবং এমনকি দলের সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসাকেও না। তিনি খুবই স্পষ্টবাদী ও বাস্তববাদী নেতা হিসেবে কর্মীদের কাছে পরিচিত ছিলেন। ভেঙে যাওয়া অংশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘আমাদের পার্টি ৩ নভেম্বর-২০১৭ তারিখে পার্বত্যবাসীর উদ্দেশ্যে প্রসীতপন্থীর ইউপিডিএফের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম বিষয়ে যে খোলা চিঠি লিখেছিল, সেই খোলা চিঠির ৯ পৃষ্ঠায় ২ নম্বর লাইনে মিঠুন চাকমার যোগ্যতার কথা কিঞ্চিত উল্লেখ করেছিলাম।’

নিহত মিঠুন চাকমাসহ প্রসীতপন্থী অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলা রয়েছে মিঠুন চাকমা, প্রদীপন খীসা ও সচিব চাকমার বিরুদ্ধে। সচিব চাকমারা কয়েকবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে ধরাও পড়েন। কয়েক বছর জেল খাটার পর সচিব চাকমারা জামিনে বেরিয়ে এলেও মামলায় নিয়মিত হাজিরা না দেয়ার কারণে সচিব চাকমা আবার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হয়ে যান। তারা কোনো মামলায় হাজিরা দেন না। কিন্তু ২০১৩ সালে মিঠুন চাকমাকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ থেকে ইউপিডিএফে উন্নীত করে, ডাইরেক্ট বাঘাইছড়ি সাজাই এলাকায় পোস্ট পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। এতে পঞ্চম শ্রেণী পাস কাঞ্চন চাকমা (জুয়েল) মানতে না পেরে পরিচালক মিঠুন চাকমার ওপর নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। যার কারণে মিঠুন চাকমা ইউপিডিএফের কাজ করবেন না ঘোষণা দিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে আসেন। তাকে আবার ছলেবলে, কৌশলে ইউপিডিএফে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য সচিব চাকমারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তাতে ব্যর্থ হয়ে খুবই কৌশলে মিঠুন চাকমাকে সচিব চাকমারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেন বলে নবগঠিত দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিঠুন চাকমাকে ধরে জেলহাজতে দিলেও তিনি খুবই অল্প সময়ের মধ্যে জেল থেকে ছাড়া পান। এতে আবার সচিব চাকমাদের সন্দেহ হয় মিঠুন চাকমা নিশ্চয় অতি গোপনে সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জেল থেকে বেরিয়ে এলেন কি না।

নব গঠিত ইউপিডিএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা যখন ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির ঘোষণা করলাম প্রসীতপন্থী ইউপিডিএফ তাৎক্ষণিক খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর এলাকায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করেছিল এবং ১৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে সড়ক অবরোধ করল। এরপর ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, যুব ফোরামকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য সচিব চাকমা, মিঠুন চাকমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির বিরুদ্ধে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, যুব ফোরামকে সংগঠিত করে খাগড়াছড়ি ধর্মপুর এলাকায় এসে বক্তব্য দিয়ে যাওয়ার জন্য।’ কিন্তু সেদিন সচিব চাকমার কথায় মিঠনু চাকমা অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন এবং নতুন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পার্টির পক্ষে যায় এমন দুই-একটি কথাও সচিব চাকমাকে মিঠুন চাকমা বলেছিলেন। এতে সচিব চাকমা মিঠুন চাকমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর পর থেকে মিঠুন চাকমাকে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) পক্ষে মনে করেই মিঠুন চাকমাকে হত্যার সুযোগ খোঁজেন সচিব চাকমা।

এ দিকে মিঠুন হত্যার পর তিন দিন পার হলেও থানায় কোনো মামলা হয়নি। গত রাতে খাগড়াছড়ির এসপি আলী আহম্মদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বজনেরা মামলা করতে আসছে না। তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে আগামীকাল তারা মামলা করতে আসতে পারেন। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, তাদের হাতে যে তথ্য আছে তাতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

আবু সালেহ আকন


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]