সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

পাহাড়ে সার্কেল প্রথা শান্তির বদলে শোষন করছে

আবু উবাইদা লেনদেনের কাজে গিয়েছিলাম সোনালী ব্যাংকে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ছিলেন জাতিতে চাকমা। যেহতু আমি নিজেও পাহাড়ি সেহতু তাকে দেখে ছুটে গেলাম তার কাছে। সৌভাগ্যবশত ব্যস্তময় ব্যাংকে দাদা কিছুটা ফ্রি ছিলেন। কথা হলো দাদার সাথে। দাদার বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরে। পাহাড় হতে সমতলে যারা চাকরি করেন তারা একজন আরেক জনের সাথী। বলতে গেলে চলাফেরায় পরিবারের সদস্যের মতো। সেদিন শুধু দাদার সাথে পরিচয় এবং কুশল বিনিময় হয়েছিলো। গত সপ্তাহে অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারী আবারও ব্যংকে যাই। বিশেষ প্রয়োজনে স্ত্রীকে টাকা পাঠানোর জন্য। অবশ্য দুপুরের দিকে গিয়েছিলাম বলে কাজ শেষ হতে হতে লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছিলো। যখন কাজ শেষ তখন আবারও উপজাতীয় দাদার সাথে দেখা হলো। দাদা লাঞ্চ করতে যাচ্ছেন। দাদা আমাকে পেয়ে জোরপূর্বক তার সাথে লাঞ্চে নিয়ে গেলেন। লাঞ্চে বসে দাদার সাথে কথপোকথন চলছিলো। যেহতু আমার মাথায় পার্বত্য বিষয়ে কিছুটা চুলকানি কাজ করে সেহতু পার্বত্য বিষয়েই দাদাকে প্রশ্ন করলাম। দাদা, পাহাড়ের পরিস্থিতি কি? উত্তরে দাদা বললন, "ভাই, আমরা নিরুপায়। পাহাড় ভালো নেই। তিন সসস্ত্র সংগঠনের অপকর্মে দূষিত বাতাস।" দাদার কথা শুনে আমি অবাক। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। পার্বত্য বিষয়ে প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বুঝে নিলাম দাদা প্রকৃতপক্ষ্যে শান্তিকামী মানুষ। এরপর দাদাকে আমি বললাম; দাদা, এই যে আমি আপনি এখন এক টেবিলে বসে খানা খাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমরা একই মায়ের সন্তান। তবে দাদা, এভাবে কেন আমরা পাহাড়ে বসবাস করতে পারিনা?" উত্তরে দাদা বললেন, "বাধা না থাকলে অবশ্যই আমরা পারতাম। আমরা সাধারন পাহাড়িরা নিরুপায়। আপনাদের কোন বাঙ্গালী সসস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতিত হলে কিংবা মারা গেলে আপনারা আন্দোলন, সংগ্রাম করতে পারেন, বিচার চাইতে পারেন।

 কিন্তু; আমরা তা পারিনা। আমাদের সন্ত্রাসীদের অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়।" দাদা আরও বললেন, "আপনারা বাঙ্গালীরা সসস্ত্র সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিয়ে হলেও পাহাড়ে ব্যবসা, বানিজ্য করে চলতে পারেন। কিন্তু; আমরা তাও পারিনা। আমাদের পরিবার প্রতি নির্দিষ্ট পরিমান চাঁদা রয়েছে। এর পরেও আবার গৃহপালিত একটি মুরগীর জন্যেও সন্ত্রাসীদের কর দিতে হয়।"

দাদাকে আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম; দাদা, পাহাড়ের শিক্ষিত উপজাতীয় সমাজ কেন এর বিরুদ্ধে যাচ্ছে না?
উত্তরে তিনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন; "আমরা সসস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে পারিবারিক ভাবে জিম্মি। ধরুন আজ আমি প্রতিবাদ করলাম। একটু পরেই সংবাদ পাবো যে পাহাড়ে আমার পরিবার পরিজন, আত্মীয় স্বজনদের উপর আক্রমন চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ওদের হাতে যতোক্ষন অবৈধ অস্ত্র থাকবে ততোক্ষন পর্যন্ত আমরা প্রতিবাদে অক্ষম। তাছাড়া, আমাদের যুবকদের ওদের সসস্ত্র গ্রুপে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়।"

সর্বশেষ প্রশ্নে পার্বত্য সার্কেল প্রথা সম্পর্কে জানতে চাইলে দাদা বললেন ; "পাহাড়ে এই প্রথা আমি মানি না। আমি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত সনদ ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছি।" না মানার কারন জানতে চাইলে দাদা বললেন ; " এই প্রথা আমাদের শোষনের বদলে শান্তি দেয়নি। আগে আমাদের সামাজিক কার্য দেখাশোনা করতো হেডমেন, কার্বারী। এখন করে আঞ্চলিক সসস্ত্র সংগঠন। অর্থাৎ সামাজিক কার্যে এই প্রথা এখন বিলুপ্ত। রাজাবাবু শুধু কর নিতে জানে, প্রজাদের সন্ত্রাসীদের কবল হতে রক্ষা করতে পারেন না। আর করবেই কিভাবে? রাজা নিজেই যে আমাদের সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিয়েছেন!!"

এভাবে প্রায় ৪৫ মিনিট খাবার গ্রহনের পাশাপাশি দাদার সাথে পার্বত্য বিষয়ে অনেক কথা শুনলাম। জানলাম তাদের সামাজিক বঞ্চনার বোবা আত্মকথা। ছুটির দিনে সময় করে দাদার সাথে ঘুরে বেড়ানোর নিমন্ত্রন নিয়ে সেদিনের মতো আমাকে বিদায় নিতে হয়েছিলো।

[বিঃ দ্রঃ পারিবারিক নিরাপত্তা জনিত কারনে এখানে নাম পরিচয় গোপন করা হলো। ]


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]