মেধাবি সেনা অফিসার হিসেবে মেজর হতে বেশিদিন লাগলো না আমার। এর মধ্যে “কঙ্গো” আর “সিয়েরা-লিয়ন” ঘুরে এসেছি দুবার UN-মিশনে। ৩০-টা দেশের জাতিসংঘ বাহিনির মধ্যে বাঙালির সুনাম আফ্রিকাতে সবচেয়ে বেশি! কৃষ্ণাঙ্গ নারী-পুরুষেরা খুবই শ্রদ্ধা করে বাঙালি সেনাদের। কারণ এখন পর্যন্ত কোন ধর্ষণ বা লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি বাংলাদেশি সেনাদের দ্বারা। বরং মানবিকতায় বাংলাদেশি সেনারা এখন বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যা আরো খ্যাতি লাভ করেছে, কক্সবাজারে বার্মিজ রোহিঙ্গাদের সেবা পরায়নতায় দৃষ্টান্তে। যখন বন্যার ঢলের মত ঝড়বৃষ্টির মাঝে খালি হাতে ঢুকতে থাকলো লাখো রোহিঙ্গা কক্সবাজার বর্ডার দিয়ে। একরাতের নোটিসে আমার পুরো কোম্পানি নিয়ে হাজির হলাম সেখানে। গাছতলায় যেখানে সেখানে পথে-ঘাটে স্কুলে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ আর শিশুরা। মাস তিনেক সেখানে পোস্টিং ছিল আমার। এতো বিশৃঙ্খলার মাঝেও আমাদের সেনারা চরমতম ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করেছে সব কিছু। লাখো ছিন্নমুল রোহিঙ্গা বিধবা কিংবা যুবতি থাকলেও, কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি সেখানে, যা এক বিস্ময়কর ব্যাপার আজকের সভ্য বিশ্বে! অথচ আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের অন্তত ১০/১২ ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়েছিল বিশ্ব মিডিয়ায়!
বাঙালি সেনাদের সভ্যতার অংশি হিসেবে নিজে মাঝে মাঝে একাকি এক অহংবোধে ভুগি আমি। প্রায়ই ইচ্ছে করে, ইস্! ঢাকার ভেঙেপড়া ট্রাফিক ব্যবস্থা যদি আমাদের সামলাতে দিতো সরকার! তবে দুদিনে পুরো ঢাকাকে ৮০% যানজটমুক্ত করতে পারতাম আমি প্লান করে! কারণ প্রশিক্ষণকালে হংকংয়ে দেখেছি, ঢাকার চেয়ে অনেক কম আর সরু সড়ক নিয়ে মারাত্মক ঘনবসতির দেশ হংকংয়ে কত সুন্দর ট্রাফিক ব্যবস্থা!
কিন্তু ৩-মাস কক্সবাজার কাটানোর পর ঢাকাতে পোস্টিং দিলোনা আমায় রাজধানীর যানজটের গাড়ি মেরামত করতে। বরং খাগড়াছড়ির “লক্ষিছড়ি” ক্যাম্পে যেতে বলা হলো আমাদের পুরো টিমকে ২৪-ঘন্টার মধ্যে। হেডকোয়ার্টারে “তথাস্তু” ম্যাসেজ পাঠিয়ে পুরো বহর নিয়ে পরদিন খাগড়াছড়ির লক্ষিছড়ি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হলো জরুরি ভিত্তিতে। দুদিন না যেতেই ৫৬-ট্রুপসের আমাদের পুরো টিমকে যেতে হলো দুর্গম বর্মাছড়িতে। যা উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে মরাচেঙ্গী ঝড়না সন্নিহিত। গোয়েন্দারা খবর দিলো, রেংগুঘাট, ডান্দিছড়া এ দুটো চাকমা পাড়াতে আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত করেছে চাকমা উগ্রবাদি সন্ত্রাসিরা। এখানের সাধারণ উপজাতিরা তাদের ফসল কাটতে যেতে পারেনা পাহাড়ে। চাঁদার জন্যে অপহরণ করা হচ্ছে সাধারণ উপজাতিদের।
মরাচেঙ্গী পাড়াটা ছিল অনেকটা আমাদের ক্যাম্প লাগোয়া প্রায় ২০০ মিটার দুরত্বে। ১০/১২-টা চাকমা পরিবার বাস করতো ওখানে বাঁশের ঘরে। ঐ পাড়ার কুড়ি-বাইশজন পুরুষ মহিলা একদিন আমাদের ক্যাম্পে এসে সহায়তা চাইলো আমাদের। যাতে পাকা ফসল তুলতে পাহাড়ে যেতে পারে তারা এবং বিক্রি করতে পারে বর্মাছড়ি বাজারে। আমাদের ১২-জওয়ান আর আমার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সারাদিন জুম ফসল তুললো ওরা নিজ ঘরে। আমরা অত্যাধুনিক জিপি-৫৮এ রাইফেল তাক করে সারাক্ষণ পাহারা দিলাম ওদের, যতক্ষণ না ওদের সব কাজ শেষ হলো পাহাড়ে! ধান, কাউন ছাড়াও তরমুজ বাংগি, লেবু, আনারস, জাম্বুরাতে পুরো উঠোন ভরলো ওদের। কারণ অনেকদিন পাহাড়ে যেতে পারেনি ওরা আতঙ্কে। বিকেলে বর্মাছড়িতে বিক্রি করে আবার কিনে আনলো নিজেদের নিত্যকার পণ্যাদি।
বার বার ফিরিয়ে দেয়ার পরও অরুপ চাকমা ও তার দুকন্যা ললিতা চাকমা আর সঞ্চিতা চাকমা চারটে তরমুজ, চারটি আনারস আর কটি পাকা বাংগি রেখে দিলো আমাদের সামনে। ওদের উপহারের প্রতিদান হিসেবে এ অসহায় দরিদ্র পরিবারের জন্যে আমাদের সাথে আনা শুকনো বিস্কিট, আর জেলির দুটো কৌটা দিয়ে দিলাম ওদের। কৃতজ্ঞতায় মাথা নত করে রইল অরুপ চাকমা আর তার দুকন্যা আমাদের প্রতি! ওদের পাহাড়ি সাধারণ জীবন দেখে করুণতায় মনে ভরে উঠলো আমার এই ভেবে যে, আহারে! সরকারি অফিসার হিসেবে কত সুযোগই না পাচ্ছি আমরা দেশে বিদেশে! অথচ কত সাধারণ জীবন এসব মানুষদের এ ঝড় জঙ্গলে!
সারাদিনের ক্লান্তিতে যখন রাতে চোখ বুঝলাম এ নতুন বসতিতে, আকস্মিক গভীর রাতে মরাচেঙ্গী পাড়া থেকে কোলাহল আর আর্তনাদের শব্দ শুনে এগুতে চাইলাম আমরা। কিন্তু খাগড়াছড়ি হেডকোয়ার্টার থেকে সুষ্পষ্টভাবে জানানো হলো, রাতে ঢাকার নির্দেশনা ছাড়া যাওয়া যাবেনা কোন উপজাতি পাড়াতে। দাঁতে দাঁত চেপে সবাই রাত জেগে ট্রিগারে হাত রেখে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে রইলাম অসহায়ের মত। চোখের পলকে অন্ধকার ভেদ করে আমাদের বাঙালি সেনাদের মত পোশাক পরা ১০/১২-উপজাতি যুবক অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়লো মরাচেঙ্গী পাড়ার অরুপ চাকমার ঘরে। মাত্র ২০০-মিটার দুরত্বে আবছা অন্ধকারে দেখছি আমরা টানাহেছড়া করছে অস্ত্রধারিরা মানুষজনদের। চাকমা ভাষাতে কি সব বলছে তাদের। বুঝতে পারলাম, দিনে আমাদের সহায়তা চাওয়াতে আক্রান্ত হয়েছে এ পাড়ার চাকমা পরিবারগুলো। কিছু করণীয় না পেয়ে আকাশের দিকে ব্রাশফায়ার করলাম বার কয়েক। ওদিক থেকেও গুলি চললো কিন্তু কোন দিকে বুঝতে পারলাম না অন্ধকারে।
ঘন্টা খানেক পর আহত অরুপ চাকমাকে বাঁশে ভর দিয়ে ও ধরে-ধরে নিয়ে এলো দুজন বৃদ্ধা। সাথে আরো ১০/১২ জন চাকমা মহিলা। পুরুষরা সবাই ভয়ে জঙ্গলে পালিয়েছে। পায়ের নলা পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে তার, তাই হাঁটতে পারছিলোনা সে একবারেই। এসেই কেঁদে কেঁদে ভাঙা বাংলায় বললো, তার দুকন্যা ললিতা আর সঞ্চিতাকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সামরিক পোশাক পরা উগ্র চাকমারা। কেন আমরা বাঙালি সেনাদের সহায়তা নিয়ে ফসল কেটেছি, কেন তোমাদের তরমুজ, বাংগি দিয়েছি তার শাস্তি পেতে হবে আমাদের। তোমরা নাকি বিস্কুট আর জেলি দিয়ে আমার কন্যাদের ধর্ষণ করেছো। ওদের কথা শুনে, রাগে দুখে, কাপুরুষতায় আর অপমানে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো আমার। বয়স্ক রুক্ষ চেহারার আহত অরুপের অবস্থা দেখে আর তার কন্যাদের অপহরণের কথা শুনে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হলো নিজেকে বারবার। আমার ক্যাম্পে শুইয়ে ফাস্ট এইড দিলাম তাকে, সাথে কিছু পেইন কিলার। সকাল ছাড়া এ দুর্গম পথে হাসপাতাল যাওয়ার কোন পথ নেই। সান্ত্বনার সুরে বললাম, চিন্তা করোনা তুমি। ভোর হলেই তোমার মেয়ে দুটোকে অক্ষত উদ্ধার করবো আমরা! তোমাকে হাসপাতাল পাঠাবো। প্রয়োজনে ঢাকাতে হেডকোয়ার্টারে কথা বলবো আমি নিজে এ ব্যাপারে !
রাতে আবেগময়ী কথা বললেও, একজন উর্ধতন সামরিক অফিসার হিসেবে নিজে জানি, নিজের কমান্ডিং অফিসার ছাড়া আর কারো নির্দেশনা চাইতে পারিনা আমি। তাই লক্ষিছড়ির এরিয়া হেড কোয়ার্টারে লে: কর্নেল হায়দার আকবরকে রাতের বিস্তারিত জানালাম ওয়ারলেসে। এবং অনুমতি চাইলাম মেয়ে দুটোকে উদ্ধারে যৌথ অভিযানের। কর্নেল অপেক্ষা করতে বললেন আমায়, পরবর্তী নির্দেশনার জন্য। দুপুর ১২-টার আগেই লে: কর্নেল হায়দার স্বয়ং উপস্থিত হলেন আমাদের মরাচেঙ্গী ক্যাম্পে। তিনি যা বললেন, তাতে নিজের মরে যেতে ইচ্ছে করলো আমার। হ্যাঁ, ভোর ৫-টার দিকে ফেসবুকে জনৈক শান্তিময় চাকমা পোস্ট দিয়েছে, “মরাচেঙ্গী পাহাড়ে সারারাত তান্ডব চালিয়েছে বাঙালি সেনারা।
লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও ওখানের নিরীহ বাসিন্দা অরুপ চাকমার ঘরে ঢুকে মা-বাবার সামনেই তাদের দুকন্যা ১৮ বছরের ললিতা চাকমা ও ১৬ বছরের সঞ্চিতা চাকমাকে ধর্ষণ করেছে বাঙালি সেনারা। চাকমা রাজা-রাণী প্রতিবাদ জানিয়েছে এ “ধর্ষণের”! Cht jummaland নামে একটা পেজ থেকে সকাল ৭-টার মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনেকে পেজে। যা এখন ভাইরাল সব জুম্ম পেইজে, মুক্তমনা আর প্রগতিশীল বাঙালিদের ফেসবুক আর ব্লগের পাতায়। ২-চাকমা আদিবাসি মেয়ের ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ বিকেল শাহবাগে “আদিবাসি অধিকার সংরক্ষণ কমিটি” আয়োজন করেছে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা! তাতে উপজাতি সংগঠনগুলো ছাড়াাও অনেক মুক্তমনা বাঙালিরা যোগ দেবে, পাহাড়ে বাঙালি সেনাদের “ধর্ষণ, হত্যা আর অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে”।
ঘটনা সরেজমিনে তদন্তের জন্যে লে: কর্নেল হায়দার এগিয়ে যান তার টিম নিয়ে মরাচেঙ্গী পাড়ার দিকে। পুরো রাতের ক্লান্তি ভর করে আমার দেহমনে এবার। আমি সাদা মেঘের মাঝে সাঁতরাতে থাকি চেঙ্গী ঝড়নার ঘোলা জলে যেন! এরপরো চোখজ্বালা কষ্টজল ধুয়ে দিতে বার বার খুঁজে ফিরি তরমুজ হাতে ললিতা আর বাংগি নিয়ে পায়ের কাছে রাখা সঞ্চিতা চাকমাকে। অনেকক্ষণ কেটে যায় বৃক্ষপাতাদের রোদঝরা দেখতে দেখতে আমার! পাড়ার লোকজনের সাথে কথা বলে ফিরে আসেন আমার উর্ধতন অফিসার। ওনাকে দেখেও “স্যালুট” দিতে ভুল যাই আমি!
কারণ মনমাঝে তখনো অভ্রপুষ্পগন্ধে ভেসে থাকে অনাদিকাল প্রেমজমুখো দুটো মুখ, যাদের নাম ললিতা আর সঞ্চিতা চাকমা! ওরা দুবোন যেন জলজীবনে ভেসে থাকা দরিদ্র যাযাবর বেদেকন্যা জলদাস নারী! যাদের নিয়ে এখনো খেলছে উপজাতি চাকমা সন্ত্রাসিরা! ইচ্ছে করে এ জঙ্গল তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করি দুবোনকে! কিন্তু কিছুই করতে পারিনা আমি, আমার বুকখোলা স্তনে ছুঁয়ে যায় তপ্তলাল দগদগে লোহার দুখ রড!
এটি একজন সেনা অফিসারের থেকে আনঅফিসিয়াল তথ্য।
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]