বুধবার, ২২ মে, ২০১৯

পাহাড়ের গুচ্ছগ্রামে বাঙ্গালীদের ঠাঁই গোয়াল ঘর!

সোহেল রিগ্যান : পার্বত্য অঞ্চলের গুচ্ছগ্রামে বাঙ্গালীরা বন্দিশালায়। সরকারী ও বিভিন্ন দাতাসংস্থার জীবনমান উন্নয়নের বরাদ্দকৃত কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীরা। শুধু যে বাঙ্গালী তাই নয়, দুর্গম এলাকার অনেক উপজাতীয় পরিবারও কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না! অথচ সরকার এসব উপজাতি-বাঙ্গালী পরিবার গুলো থেকে নিয়মিত খাজনা আদায় করছে ইউনিয়ন পরিষদ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সাহায্য সহযোগিতা তাদের জন্য নয়! সরকারি ও বিভিন্ন দাতাসংস্থার পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বরাদ্দকৃত অর্থ সাহায্য সহযোগিতা রাঘববোয়ালদের জন্য। এইখানে বেশিরভাগ সাহায্য সহযোগিতা ইউপিডিএফ-জেএসএস সমর্থিত লোকজনকে দেওয়া হয় খুশি করতে ও মিডিয়া প্রচার করতে। ইউপিডিএফ-জেএসএস কে খুশি করতে পারলে প্রশাসন সফল। সরকারি চাকরিতে আসা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ কর্মকর্তা অদক্ষ৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে তাদের নেই নুন্যতম জ্ঞান ধারণা৷ যার কারণে পাহাড়ে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সহ সবদিকেই অনিয়ম ও ভাটা। সরকারের উচিত এই অঞ্চলে কোন সরকারি কর্মকর্তা দেওয়ার আগে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়বস্তু উপর দিকনির্দেশনা সহ প্রশিক্ষণ দেওয়া৷ যেহেতু এইখানে ১৩টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস সহ রয়েছে অস্ত্রধারী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। সেহেতু এখানকার প্রশাসনকে অবশ্যই সুদক্ষ হতে হবে।

প্রশাসনের ব্যর্থায় চলতি বছরের গত ১৭ মার্চ রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থাকা সরকারি জনবলের উপর হামলা করেছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ এমনকি ক্ষমতাশীল আওয়ামীলীগের উপজেলা সভাপতি সহ সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে ইউপিডিএফ-জেএসএস হত্যা করেছে৷ অথচ এর পরেও প্রশাসন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকারী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জুড়ে প্রতিদিন অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম, ধর্ষন সহ রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চলছে। অথচ প্রশাসন নীরব ভূমিকায় অবতীর্ণ! ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি ছিলো ভাঁওতাবাজি। এই চুক্তির মাধ্যমে সরকারকে জেএসএস সন্তু গ্রুপ বোকা বানিয়েছে৷ আগে ছিলো নিজেরা এক গ্রুপ, এখন ৪ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম করে যাচ্ছে৷ তাদের সংগঠন গুলোর নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও আর্দশ ও নীতিনৈতিকতা এক। এদের কারণেই গুচ্ছ গ্রামের বাঙ্গালীদের দুঃখদুর্দশা।

সব বাঙ্গালী ও সব উপজাতি সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে না। সরকার দলীয় লোকজন ও প্রশাসনের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক ভালো তাদের জন্য সাহায্য সহযোগিতা। দীর্ঘদিন থেকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান অঞ্চলের সাধারণ উপজাতি-বাঙ্গালী মানবেতর জীবনযাপন করছে৷ গুচ্ছ গ্রামের বন্দিশালায় থাকা বাঙ্গালীদের তিন বেলায় আহার মিলে না। অনেক বাঙ্গালী সন্ত্রাসীদের ভয়ে সরকার দেওয়া তিন একর ও পাঁচ একর জায়গায় দখলে যেতে পারছে না। গুচ্ছ গ্রামের সীমিত জায়গাতে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে বাঙ্গালীদের। ছেলে সন্তানের তিন বেলা খাওয়ানো সহ পড়ালেখা করানোর মতো নেই সামর্থ। এসব বাঙ্গালীদের খবরাখবর স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ রাজনৈতিক কর্তারা কেউ রাখে না।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুচ্ছ গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বাঙ্গালীদের জীবনযাপনের দুঃখদুর্দশার বাস্তবিক তথ্যচিত্র। যেনো এই বাঙ্গালীরা এদেশের বাসিন্দা নই। কেউ নিচ্ছে না এদের খবর। গুচ্ছ গ্রামের বাঙ্গালীদের মধ্যে সবাই সরকারি রেশন কার্ডের তালিকাভুক্ত নয়। বেশিরভাগ গুচ্ছ গ্রামের বাঙ্গালীরা রেশন পাচ্ছে না। এদের জীবিকা নির্বাহ করার মতো নেই পথ। চাষাবাদ করার মতো নেই জায়গা জমি৷ পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে চলে তাদের জীবন৷ বেশিরভাগ বাঙ্গালীদের থাকার ঘর নেই। অনেকেই আবার গোয়াল ঘরে থাকেন৷ এই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুচ্ছ গ্রামের বাঙ্গালীদের বন্দিশালায় জীবনমান!

সমতল ভূমির অনেক সুশীল পন্ডিত ও তথাকথিত মিডিয়া সংবাদমাধ্যম সহ জ্ঞানপাপীরা বরাবরই অভিযোগ করে থাকেন, পার্বত্য অঞ্চলের বাঙ্গালীরা পাহাড়িদের জায়গা জমি দখল করা সহ পাহাড়ে ধর্ষণের মতো নানান অপরাধে জড়িত। অথচ বাস্তবিক সবকিছুই ভিন্ন। সরেজমিনে পাহাড় পরিদর্শন না করলে পাহাড়ের প্রকৃত সত্য জাঁজ করা যাবেনা। চট্টগ্রাম, ঢাকাই বসে পাহাড় নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করে দেশবাসীর কাছে পার্বত্য বাঙ্গালীদের ব্যাপারে কাল্পনিক তথ্য দেওয়া হয়। যা প্রকৃত পক্ষে জঘন্যতম মিথ্যাচার।

পাহাড়ে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণ ঠেকাতে ব্যস্ত বাঙ্গালীরা। এখানে কারোই জায়গা জমি দখল করার সময় নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় এমন কোন জিনিসপত্র নেই যে ইউপিডিএফ-জেএসএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠী চাঁদা আদায় করেনা। এক প্রকার বলতে গেলে এই অঞ্চলে বসবাসরত নিরীহ উপজাতি-বাঙ্গালী সন্ত্রাসীদের নিকট জিম্মি৷ প্রশাসন এখানে নামে মাত্র রয়েছে৷ প্রশাসনের ভূমিকা এইখানে প্রশ্নবৃদ্ধ বরাবরই৷ প্রশাসনের সম্মুখে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অস্ত্র নিয়ে হামলা সহ চাঁদাবাজি, অপহরণ, গুম প্রতিনিয়ত করছে৷ এইখানে প্রশাসন ও বাঙ্গালীদের সঙ্গে ইউপিডিএফ-জেএসএস এর কোন প্রকার জামেলা সৃষ্টি হলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বাজার বয়কট করে। বাঘারহাট বাজার, নানিয়ারচর বাজার, পানছড়ি বাজার বয়কট তাঁরই প্রমাণ। প্রশাসন পারেননি এখনও অনেক গুলো বাজার চালু করতে!! এসব কারণেই বুঝা যায় এইখানে প্রশাসন ব্যর্থ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সফল।

গুচ্ছগ্রামের বাঙ্গালীদের জন্য ভবিষ্যতে চরম দুঃখদুর্দশা অপেক্ষা করছে৷ বিভিন্ন কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক সত্য তুলে ধরা সম্ভব হয়নি৷ অনেক ঝুঁকির মধ্যে এই সামান্য লেখাটি তুলে ধরলাম। প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে আন্তরিক নয়। গরম ভাত দিলে বিড়াল বেজার হয়, আমার এই লেখার কারণেই প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও বেজার হবেন নিশ্চিত।



পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]