মাহফুজ আলম: রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা পার্শ্ববর্তী রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের বালুমুরা মারমা পাড়া নামক দুর্গম এলাকায় পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় ধরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়, তবে নিহতদের পরিচয় মেলেনি। গত সোমবার ১৮ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৭টার দিকে রাজস্থলী উপজেলার বালুমুরা পাড়ায় এই গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। সৃষ্ট এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে এবং থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গেলে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসলেও আতংক রয়ে গেছে জনমনে। রাজস্থলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোফাজ্জল আহম্মেদ খান এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বালুমুরা এলাকায় আঞ্চলিক দলের মধ্যে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। বিশেষসূত্রে জানা যায় নিহতরা সবাই জেএসএস’র আঞ্চলিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় সচেতন মহল জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা) গ্র“পের মধ্যে অন্তকোন্দলের জেরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে, অপর আরেক দলের পরিচয় জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসী, নিরীহ জনসাধারণ ও ভুক্তভোগীরা তথ্য দিয়ে এ প্রতিনিধিকে জানান, পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার ত্রিমুখী আতংকে সাধারণ মানুষ, খুন, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজি ও বন্দুক যুদ্ধ থেমে নেই। এক কথায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত হওয়ায় বিষাক্ত বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলে। সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের বালুমুড়া মারমা পাড়া এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত, বাঙ্গালহালিয়া হেডম্যানকে গুলি করে হত্যা, রাজস্থলীতে আ’লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা, কারিগর পাড়া জোড়াখুন, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে গুলি করে হত্যা করার মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পার্বত্য জনপদ। এছাড়াও খাগড়াছড়ি, নানিয়ারচর, বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়িসহ পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক চলছে হত্যাযজ্ঞ। এছাড়াও গেল কয়েক বছর আগে কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরমের আগাপাড়া এলাকায় থোয়াইসাচিং মারমা (৪২)কে গুলি করে হত্যা করাসহ চিৎমরম এলাকায় আরো তিনজনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করার ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। হত্যাকান্ডকে ঘিরে আঞ্চলিক দলের উভয়ে উভয়কে দোষারোপ করছে।
পার্বত্য অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) সহ তিনপক্ষ মুখোমুখী অবস্থানে থাকায় অকারণেই শান্তির পাহাড়ে অঝর রক্ত ঝড়ছে। অধিপত্য বিস্তার নিয়ে অহরহ ঘটছে বন্দুক যুদ্ধ, খুন, অপহরণ, গুম ও চাঁদাবাজি। বিবাদমান ত্রিপক্ষগুলো মুখোমুখী অবস্থানে অনড় থাকায় পাহাড়ে বাস করা নিরীহ জনসাধারণ আতংকিত। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলে এখন ত্রিপক্ষিও মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেওয়ায় এখানকার মানুষ ভীত অবস্থায় দিন যাপন করতে হচ্ছে। সাধারণ পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা এখন নিরাপত্তাহীন। অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীরা বলেছেন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কয়েক বছরে বন্দুক যুদ্ধ হয়েছে কয়েক শ’ বার, খুন হয়েছে প্রায় ৬শ ৫৩ জন, অপহরণ হয়েছে কয়েক শ জন, চাঁদা দিতে হয়েছে কয়েক হাজার জনকে, গুম হয়েছে প্রায় ৫০ জনেরও বেশী। এছাড়াও ধর্ষণের ঘটনাসহ নানা ভীতিকর পরিস্থিতি ঘটে আসছে। গেল কয়েক বছরে পার্বত্য নাড়াছড়ি, দেওয়ান পাড়া, কাপ্তাই চিৎমরম, ধনপাতা, জারুলছড়ি, বরকল, বাঙ্গালহালিয়া, কারিগড় পাড়া, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, বাঘাইছড়ি, লক্ষীছড়ি, নানিয়ারচর, কাউখালী, লংগদু, জুরাছড়ি, আরাছড়ি, এসব ছাড়াও বান্দরবান, বাঘাইছড়ি ও রাঙ্গামাটি এই তিন পার্বত্য জেলার সদর এলাকা সমূহে থেমে নেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক হত্যা, গুম, অপহরণ ও বন্দুক যুদ্ধ বাড়ছেই। হতাহত, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির তালিকা তিন পক্ষই তিন পক্ষকে পরস্পর দোষারোপ করছে। এসব যুদ্ধে জেএসএস ও ইউপিডিএফ’এর নেতাকর্মীর সংখ্যার চেয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা বেশী।
উল্লেখিত ঘটনাবলী নিয়ে স্থানীয়দের অভিমত দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ে এ যাবৎ যত হত্যাকান্ড বা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়নি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ফলে পাহাড়ী হউক আর ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হউক বা বাঙ্গালী হউক সবাই জিম্মি অবস্থায় আতংকে প্রহর গুনছে পার্বত্য এলাকার শান্তিপ্রিয় জনসাধারণ।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের দাবী সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি দমনে ও জানমাল রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী ও র্যাব বাহিনীর টহল জোরদার করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন অতিব জরুরী।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]