শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপদ নন জনপ্রতিনিধিরাও

পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপদ নন জনপ্রতিনিধিরাও কথায় কথায় খুন অপহরণ, পাঁচ বছরে খুনের শিকার ৩২১ জন, প্রাণভয়ে থানায় মামলাও করে না ভুক্তভোগীদের পরিবার। সুনসান নীরব আর শান্ত পাহাড়ে জ্বলছে অশান্তির আগুন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যা বা অপহরণের মতো ঘটনা ঘটছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুন আর অপহরণের ঘটনা ঘটছে চাঁদাবাজি আর নিজ দলের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে। মাত্র দুই দিন আগেও পার্বত্য এলাকার আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস-এর চিফ কালেক্টরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, উপজাতি সন্ত্রাসীদের হামলায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৩২১ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। আর ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছেন ৭২ জন। এর পেছনে কাজ করছে উপজাতিদের গড়ে তোলা বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী। এসব সশস্ত্র আঞ্চলিক দলের অন্তঃকোন্দল, নিজেদের প্রভাব বিস্তারের ঘটনার বলি হচ্ছেন নিরীহ পাহাড়বাসী। সন্ত্রাসীদের অবৈধ অস্ত্রের মুখে জিম্মি হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সরকার দলীয় এমপি দীপঙ্কর তালুকদার গত ২৬ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দুর্গম এই পাহাড়ে আমরাও তো নিরাপদ নই। আমাদের জীবনেরও নিরাপত্তা নেই। এখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। শান্তিচুক্তি বিরোধী শক্তি এখানে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে খুবই তৎপর। তারা জনগণকে কোণঠাসা করে রাখতে চায়। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় এরাই। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে, চাঁদাবাজির ঘটনা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু তারা সব সময় চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্ষেপিয়ে তুলতে। যার ফলে পক্ষ-বিপক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটবে। যা পাহাড়ের রাজনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতিতে অশান্ত করে তোলে। তারই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ১৮ মার্চ উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী প্রশাসনিক ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর তারা নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে।

গত ১৯ মার্চ বিলাইছড়ি উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতিকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। তারা সর্বদাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ঘাম ঝরাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দৈনন্দিন কাজ-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজ কোথাও স্বস্তিতে নেই এ পাহাড়বাসী। নিজের প্রাণের ভয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে কোনো অভিযোগও করেন না। ফলে এসব অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই কম-বেশি হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিসহ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগীরা থানায় কোনো মামলা করেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় পঞ্চায়েত, কারবারি কিংবা হেডম্যানদের কাছেও অভিযোগ করেন না। এমন কি গণমাধ্যমের কাছেও মুখ খুলতে ভয় পান ভুক্তভোগীরা। ফলে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পরও এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বরং অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়েছে। হত্যা, খুন, ধর্ষণ আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পাহাড়বাসী। পার্বত্য অঞ্চল ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। 

২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২২ বছর পূর্তি। এ উপলক্ষে গত কয়েক দিন খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পাহাড়ি ও বাঙালিদের সঙ্গে কথা বলে পাহাড়ে অশান্তির নানা তথ্য জানা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), যারা শান্তিবাহিনী গঠন করে সশস্ত্র লড়াই শুরু করেছিল তাদের কাছে থাকা সব অস্ত্র জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ অস্ত্র আজ পর্যন্ত জমা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে আরেকটি আঞ্চলিক দল, যার নাম ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এ দুটি দলের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অগণতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ তুলে পাহাড়ে জন্ম নিয়েছে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ এবং জেএসএস সংস্কার (এম এন লারমা) নামের আরও দুটি আঞ্চলিক দল। এই চারটি একে অপরের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে ক্ষমতা আর চাঁদাবাজির দ্বন্দ্বে। ফলে এসব দলের মধ্যকার কোন্দল ও প্রভাব বিস্তারের রোষানলে অশান্তির আগুনে জ্বলছে পাহাড়বাসী। 

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির বলেন, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদাই তৎপর। এ জন্য আগের তুলনায় চাঁদাবাজির ঘটনা কমেছে। তবে কিছু কিছু জায়গা এতটাই দুর্গম যে সেখানে চাইলেও আমরা সময়মতো পৌঁছতে পারি না। ফলে আমরা সেখানে যদি সহজে পৌঁছতে পারতাম তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকত না। আমরা আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা করতে পারি না।

লেখক : মানিক মুনতাসির, পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]