বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

“পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” আত্মপ্রকাশের সংবাদ সম্মেলন

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নিপীড়িত ও বঞ্চিত সকল মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নবগঠিত “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম। সুজলা সফলা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এই জাতির জন্য স্রষ্টার দেওয়া এক শ্রেষ্ঠ উপহার। পাকৃতিক সম্পদে ভরপুর অপরূপ সৌন্দর্যময় সবুজ পার্বত্য ভূমি নিয়ে ষড়যন্ত্র আজকের নয়। সেই ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যে কারণে ৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় যেমন পার্বত্য এলাকার কতিপয় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের ইন্ধনে সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ভুল পথে পরিচালিত করা হয়েছিল, তেমনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একই গোষ্ঠী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আর এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ১৯৭৪ সালে এক ঠুনকো অজুহাতে শান্তিবাহিনীর ন্যায় একটি পাহাড়ি জংঙ্গি সংগঠনের জন্ম হয়।

৮০’র দশকে এসে এই ষড়যন্ত্রকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক বিভিষীকাময় অঞ্চলে পরিণত করে। মূলত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর পার্বত্যম চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরীর জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বারুদের গন্ধে বিষাক্ত করে তোলা হয়েছে। এই হিংসা, হানাহানি, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ ও কৌশল গ্রহণ করলেও স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতার কারণে সমস্যা আরো জট পাকিয়েছে। সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি কখনই ছিল না। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে বর্তমান সরকার কর্তৃক রাঙ্গামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।

কিন্তু শান্তি ও উন্নয়নে গৃহিত সরকারী সকল প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দলগুলো জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ খুনের ঘটনা অব্যাহত রেখেছে এবং চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পক্ষান্তরে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অজুহাতে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নানাভাবে বিশেষ সুবিধা দেয়ার কারণে অবৈধ অস্ত্রধারীদের নির্যাতনের পাশাপাশি পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বঞ্চনা ও হতাশা। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৯১ সালে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠনসহ অন্যান্য বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কর্তৃক বিভিন্ন সময় নানা সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, রাষ্টীয় অখন্ডতা বজায় রেখে বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক “পার্বত্য চুক্তি” সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শান্তিবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও কিছু অস্ত্র জমা দিয়ে তাদের সশস্ত্র তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় বরং চাঁদাবাজীর টাকায় তাদের অস্ত্রের ভাণ্ডার দিন দিন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। আর এই চাঁদাবাজীর টাকার লোভে জনসংহতি সমিতি ভেঙ্গে একের পর এক মোট চারটি উপজাতীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম হয়েছে। যার ফলে পার্বত্য চুক্তির কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না পার্বত্যবাসী।পাহাড়ের এই চারটি সশস্ত্র সংগঠন এখন একদিকে যেমন চাদাবাজী ও রাহাজানির মাধ্যমে জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে, অন্যদিকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে প্রায়ই তারা নিজেরাই সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে জীবন ও সম্পদের হানি ঘটিয়ে পাহাড়ের পরিবেশ আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। তাদের আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ি-বাঙালি কেউ সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী হলো সন্ত্রাসীদের টার্গেট আর পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষ বলিরপাঠা। গোষ্ঠীভেদে নির্যাতনের মাত্রা কিছু কমবেশী হলেও একটি বিশেষ গোত্র ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ আজ এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নির্যাতনের শিকার।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই নির্যাতন নিপীড়ন এবং বঞ্চনা হতাশার পরিবেশ কোনোভাবেই এড়াতে না পেরে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিরাও বিভিন্ন সময়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নানা সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে। এ সকল সংগঠন সমূহের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনসমূহের হাত থেকে রক্ষা করা এবং নির্যাতিত নিপীড়িত সকল জনগোষ্ঠীর মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জান-মালের হেফাজতে ভুমিকা রাখা। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন এই সংগঠনগুলো কখনোই শুধুমাত্র বাঙালি অধিকারের কথা বলেনি বরং বরাবরই পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের সমঅধিকার নিশ্চিতের কথা বলে সেই লক্ষ্যেই কর্মকান্ড চালিয়ে এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিচ্ছিন্নতাবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে এ সংগঠনগুলো কখনোই সুসংহত ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি। ষড়যন্ত্রের চোরাবলিতে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত হয়ে তারা একে একে বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। আর এই বিভেদ ও অনৈক্যের কারণে এসব সংগঠন কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণে সফল হতে পারেনi
প্রিয় উপস্থিতি,

আমরা আজকের এ পর্যায়ে আবারও দৃঢ়তার সাথে দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের তাড়া করে ফিরছে। এই ষড়যন্ত্র হয়তো অনেক আগেই বাস্তবায়িত হয়ে যেতো যদি না পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের দেশ প্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণ সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন না করতো। কিন্তু সেই দেশ প্রেমিক নিরাপত্তা বাহিনীর নামেও ষড়যন্ত্রকারীগণ নানা অপবাদ এবং মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে সর্বদা তৎপর রয়েছে। তাদের অপপ্রচারের কারণেই পাহাড়ের বেশ কিছু অঞ্চল থেকে সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে আনার ফলে ওই এলাকার মানুষদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের কারো অজানা নয়। প্রতিনিয়তই সবুজ পাহাড়ে রক্ত ঝরছে, কখনো বাঙালিদের আবার কখনো বা পাহাড়িদের। খুনের পাশাপাশি পাহাড়ের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প ও কৃষিখাত স্থবির হয়ে রয়েছে চাঁদাবাজীর যাতাকলে। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ও উপজাতীয়দের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাত তৈরি করে এবং উপজাতীয়দের বিপন্নতা প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি অর্জনের মাধ্যমে (অশুভ উদ্দেশ্যে) বাংলাদেশের স্পর্শকাতর জাতীয় ইস্যুতে বিদেশী শক্তিকে জড়ানো হচ্ছে বলে সকল আলামত স্পষ্ট।

এরই পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহল উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং দুস্কৃতিকারীদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ তৈরির প্রক্রিয়া তরান্বিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ কথা আপনাদের কারো অজানা নয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি জনগোষ্ঠী একটি গুরুত্বপুর্ণ আঞ্চলিক অংশীদার এবং নাগরিক হিসেবে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা দায়বদ্ধ। আর এ দায়িত্ব পালনে তারা সকল শ্রেনীর নির্যাতিত মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র অনন্তকাল ধরে চলতে দেয়া যায় না। একই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে সংখ্যাগরিষ্ঠ পাহাড়িদের হাতে বলির পাঠা হতে দেয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সময় এসেছে পাহাড়ি-বাঙালি ভেদাভেদ ভুলে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আর এই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের আয়োজন।

এ অবস্থায় আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত সংগঠনগুলো তথা পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ, পার্বত্য অধিকার ফোরামসহ অন্যান্য সংগঠন এর সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হলো। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের গণমানুষকে সাথে নিয়ে এক ও অভিন্ন লক্ষ্যে "পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ" নামে নতুন একটি সংগঠনের নাম ঘোষণা করছি। এ মূল সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে থাকবে "পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ" ও "পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা পরিষদ"। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাতে চাই যে, নবগঠিত এই সংগঠনটি কোনভাবেই শুধুমাত্র বাঙালিদের সংগঠন নয়। বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙালি নির্বিশেষে সকল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য এর দ্বার উন্মুক্ত থাকবে। পরিশেষে দ্ব্যার্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল শ্রেণীর ও পেশার মানুষের স্বার্থ রক্ষায় নবগঠিত এই সংগঠনটি উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মত চাঁদাবাজি বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত হবে না। আমাদের বিশ্বাস পাহাড়ের সর্বস্তরের ও সব সম্প্রদায়ের শান্তিকামী ও দেশ প্রেমিক মানুষ এই নব সংগঠনের ছায়াতলে এসে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হবে। আমাদের এ মহান প্রয়াসে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]