মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯

শান্তিচুক্তি যে কারণে অনিবার্য ছিল

পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পূর্ণ হলো। মনে পড়ছে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরের কথা। দিনটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় ও বিশ্বশান্তির জন্য আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে পাহাড়ি জনগণের নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যোগ হয় ‘শান্তিবাহিনী’ নামে একটি সামরিক শাখা। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর সদস্য সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। বলা হয়ে থাকে, ভারতের ত্রিপুরায় ঘাটি স্থাপন করে সেখান থেকে অভিযান পরিচালনা করতে থাকে শান্তিবাহিনী। ১৯৭৭ সালে তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি সাঁজোয়া বহরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ হামলার পর সেনাবাহিনী ওই অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে ২৪তম ডিভিশনের জিওসির অধীনে আনা হয়। এরপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

জিয়া-এরশাদ শাসকদের আমলে সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকার পাহাড়ি জনগণকে শান্ত করার লক্ষ্যে সেখানে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করা হয়। অবশ্য তৎকালীন সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোন আস্থা ছিল না। কারণ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। পাকিস্তান আমলে সৃষ্ট কাপ্তাই হ্রদের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ জনগণ গৃহহারা হয়। গৃহহীনদের ভূমির ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল তৎকালীন সরকার। তারপরও উপজাতি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ছিল পুঞ্জীভূত। সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানির ফলে প্রায় প্রতিনিয়তই উপজাতি সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, ধর্ষণসহ কোন না কোন অপরাধের শিকার হচ্ছিল নিরীহ বাঙালিরা। এমনকি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পেত না নিরীহ পাহাড়িরাও। এ অবস্থার উত্তরণে পাহাড়ে অতি শিগগিরই অস্ত্র বিরতি চুক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। 

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই পার্বত্য এলাকায় শান্তি স্থাপনে উদ্যোগ নেয়া হয়। ‘শান্তিচুক্তি’র জন্য ইউনেসকো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতে, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চুক্তির আলোকে এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড়ি জনগণের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে রাঙ্গামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমিবিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নে শান্তিচুক্তির অসামান্য অবদান রয়েছে। তবে জনসংহতি সমিতি নিজেরা শান্তিচুক্তি শতভাগ মানতে ব্যর্থ হয়েছে। শান্তিচুক্তিতে তাদের সব সদস্যর অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার শর্ত থাকলেও তারা তা করতে সফল হয়নি। ফলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের শতভাগ আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য শতভাগ শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না বা বিলম্ব হচ্ছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৩, ২৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এ এলাকার জনসংখ্যা ১৫, ৯৮, ২৯১ জন। এদের মধ্যে ৫ লক্ষ মানুষ ১৪ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসী। ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এ এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্র্রাজ্য ১৬৬৬ থেকে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে নেয়। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসেবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলা-রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে বিভক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শান্তিবাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিল অসংখ্য নিরীহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, বাঙালি ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হবার পর কিছু ভাঙা ও পুরাতন অস্ত্র শান্তিবাহিনীর সদস্যরা জমা দিয়ে সাধারণ ক্ষমা ও পুনর্বাসনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহণ করে। কিন্তু যে শান্তির অন্বেষায় শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল তা আজো অধরা রয়ে গেছে। এর প্রধান কারণ পাহাড় এখনও অবৈধ অস্ত্রমুক্ত নয়।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, শান্তিচুক্তির পূর্বে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৩৪৩ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৭৩, বিজিবি ৯৬, পুলিশ ৬৪, আনসার ভিডিপির ১০ জন। নিহত সেনা সদস্যদের মধ্যে অফিসার পাঁচজন, জেসিও তিনজন, বাকিরা সৈনিক। এছাড়াও দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনা, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগ, ভূমিধস প্রভৃতি কারণে মারা গেছেন অনেকে। এর মধ্যে শান্তিচুক্তির পূর্বে শুধু ম্যালেরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৬০ জন এবং পরে ৮১ জন মারা গেছেন। উভয় কারণে আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তবে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য মারা গেছেন। এর মধ্যে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে মারা গেছেন ১১ জন, ৫ জন রাঙ্গামাটির ভূমি ধসে। 

শান্তিচুক্তির পূর্বে নিরাপত্তা বাহিনী ১৬ শতাধিক অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে গ্রেনেড ৩৫৯টি, মর্টার ৭০টি, মাইন ১৩টি এবং অন্যান্য গোলাবারুদ সাড়ে ৪ লক্ষ। প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে আরও জানা যায়, শান্তিচুক্তির পর ২০০৫ সাল থেকে অদ্যাবধি ২৭৩০টি অস্ত্র ও ১ লাখ ৮৬ হাজার গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শান্তিচুক্তির পূর্বে ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ২৩৮ জন উপজাতি, ১০৫৭ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১৮১ জন উপজাতি ও ৬৮৭ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ২৭৪ জন উপজাতি ও ৪৬৮ জন বাঙালি। ২০১৮ সালে ৬৮ জন এবং ২০১৫ সালে ৬৯ জন খুন হন। ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ৫৬ জন। এছাড়া ২০১৪ সালে ৫৪ জন, ২০১৬ সালে ৪১ জন এবং ২০১৭ সালে ৩৩ জন খুন হয়েছেন। ২০১৮ সালের ৩ মে ইউপিডিএফের (মূল) সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে জেএসএস (সংস্কার) সমর্থক নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করে। এর একদিন পর শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ইউপিডিএফ (মূল) সন্ত্রাসীরা ব্রাশফায়ার করে ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজনকে হত্যা করা হয়। ১৯৯৭ থেকে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শান্তিবাহিনী কর্তৃক ৪৭৪ জন উপজাতি, ১৮৬ জন বাঙালি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬৪৬ জন উপজাতি ও ৬৪২ জন বাঙালি। অপহরণের শিকার হয়েছে ৯১০ জন উপজাতি ও ৩৮৪ জন বাঙালি। এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো- ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশ সরকার ও জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয় মূলত তখন থেকেই নতুন ষড়যন্ত্রের নীলনক্সা রচিত হয়। মহলবিশেষ নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও তাদের গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য পাহাড়ে সশস্ত্র গ্রুপগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে শুরু করে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিকতায় শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে।

শান্তিচুক্তির অনেক সাফল্য ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে মাত্র ৪৮ কিমি রাস্তা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলে নির্মাণ করেছে প্রায় ১৫৩৫ কিমি রাস্তা, অসংখ্য ব্রিজ ও কালভার্ট। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, কলকারখানাসহ সম্পন্ন হয়েছে অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম। ১৯৭০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাত্র ছয়টি উচ্চবিদ্যালয়/কলেজ ছিল যার বর্তমান সংখ্যা ৪৭৯টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন প্রায় প্রতিটি পাড়ায়। এছাড়াও ৫টি স্টেডিয়াম, ২৫টি হাসপাতাল এবং বর্তমানে ১৩৮২টি বিভিন্ন কটেজ ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষার হার ১৯৭০ সালে মাত্র ২% শতাংশ ছিল যা বেড়ে এখন ৪৪.৬% হয়েছে। চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। উন্নয়নের আরও স্পষ্ট নজির রয়েছে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবানিতেও।

পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়কমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সরকার গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি ৪টি খণ্ডে বিভক্ত ‘ক’ খণ্ডে ৪টি, ‘খ’ খণ্ডে ৩৫টি, ‘গ’ খণ্ডে ১৪টি এবং ‘ঘ’ খণ্ডে ১৯টিসহ মোট ৭২টি ধারা রয়েছে। তার মতে, তিন পার্বত্য জেলায় হস্তান্তরযোগ্য ৩৩টি বিষয়/বিভাগের মধ্যে এ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৯টি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৯টি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৮টি বিষয়ে/দফতর হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বাস্তবায়িত ধারাসমূহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলছে। একইভাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেছেন, চুক্তির বেশিরভাগ বিষয়ই বাস্তবায়ন হয়েছে। চুক্তিতে ৭২টি শর্ত আছে, তার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। আর ১৫টি আংশিকভাবে হয়েছে এবং ৯টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আশাকরা হচ্ছে বাকি ধারাগুলোও শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির ইতিবাচক বয়ান সত্ত্বেও পাহাড়ি সন্ত্রাসী, আঞ্চলিক সংগঠনের নেতা ও কতিপয় বুদ্ধিজীবী ক্রমাগত শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারকে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি রাঙ্গামাটিতে এক জনসমাবেশে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য আন্দোলন দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন বলেই পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছে। এটা যেন কেউ ভুলে না যান। শান্তিচুক্তি আমরা করেছি। বিএনপি করেনি।’ সরকারি তথ্য মতে, ‘শান্তিচুক্তি অনুযায়ী ৩৩টি বিভাগের মধ্যে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ৩০টি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ৩০টি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে ২৮টি বিভাগ ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমান সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে উপজাতিদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

এ কথা সত্য, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। পার্বত্য জেলাগুলোর উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। শেখ হাসিনার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা সচেষ্ট। সেই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বর্তমান সরকারের কোন অগণতান্ত্রিক ও জনবিরোধী উদ্যোগ নেই। গত মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়েছেন। ভূমি কমিশন গঠন ও ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল ২০১০’ জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ধারণা সবাই মেনে নিয়েছেন। মূলত পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টাই গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক : মিল্টন বিশ্বাস, অধ্যাপক ও পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]