বুধবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

পাহাড়ে ধরন পাল্টেছে চাঁদাবাজির, বছরে ৪’শ কোটি টাকার চাঁদা আদায়

পার্বত্য অঞ্চলে চাঁদাবাজির ধরন পাল্টেছে। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলার শহরসহ দুর্গম এলাকাগুলোতে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এক হালি ডিম, কলা, এমনকি, নারকেল কিংবা ডাবের কাঁদি অথবা একটি মুরগি বিক্রি করতে হলেও চাঁদা গুনতে হয় পাহাড়ে বসবাসকারীদের। আগে এই চাঁদা সরাসরি নেওয়া হলেও এখন বেশির ভাগ চাঁদা সংগ্রহ করা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। আগে দৈনন্দিন চাঁদা আদায় করা হতো। এখন সেটার ধরন পাল্টে মাসিক ও সাপ্তাহিক কিস্তি হিসেবে সে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাণে মেরে ফেলা হচ্ছে। অপহরণ করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। সময়মতো মুক্তিপণের টাকা না দিলে অপহৃত ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে। সশস্ত্র আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা হাট, বাজার, লোকালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদা সংগ্রহ করে তা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দলের কমান্ডাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চিঠি পাঠিয়ে রীতিমতো কঠোর নির্দেশনা দিয়ে চাঁদা আদায়ে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। 

পাহাড়ি অঞ্চলে চলাচলকারী বাস, ট্রাক, টেম্পো, সিএনজিসহ যে কোনো ধরনের যানবাহনে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাসিক হারে সুনির্দিষ্ট কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয় চালক ও মালিকদের। যা ছাড়পত্র কিংবা রুটপারমিটের মতো কাজ করে। দিনে কিংবা রাতে পাহাড়ে নির্বিঘ্নে চলতে হলে গাড়ির চালকের কাছে বিশেষ সংকেত সংবলিত এই ছাড়পত্র কিংবা রুটপারমিটের কাগজ সঙ্গে রাখতে হয়। সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দাবিকৃত চাঁদা না দিলে নিরস্ত্র বাঙালিদের দিনদুপুরে গুম করে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এসব সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা। শুধু তাই নয় পাহাড়ে বসবাসকারী নিরীহ উপজাতিরাও রেহাই পাচ্ছে না এদের অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে। তাদের কথা মতো চাঁদা না দিলে কিংবা তাদের মনোনীত প্রার্থী বা কারবারিদের (স্থানীয় জনপ্রতিনিধি) কথা মতো না চললেই তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

 ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) পক্ষ থেকে সংগঠনটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা তার সংগঠনের সদস্যদের চিঠি দিয়ে এ ধরনের কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, প্রিয় সহকর্মীরা, সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা। আপনারা সবাই অবগত আছেন যে, ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তির ২২ বছর পূর্তি। প্রতি বছরের মতো এ বছরও দিবসকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে নানা ধরনের সভা সেমিনার ও অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই সব চিফ কালেক্টরদের জানাচ্ছি, আপনারা নিজ নিজ এলাকার জনসাধারণ, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, পরিবহন মালিক সমিতি, হোটেল-মোটেল মালিক, পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করে পার্বত্য চুক্তির অনুষ্ঠানাদি পালনে সহায়তা করুন। কেউ অনুদান প্রদানে অস্বীকৃতি বা অসম্মতি জানালে প্রয়োজন অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, আদায়কৃত অনুদানের অর্থ থেকে আপনাদের বিশেষ সম্মানী প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়া, গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় হবে। তাই যত বেশি সম্ভব অনুদান আদায় করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। 

পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোয় কাজ এমন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর অন্তত ৪০০ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করেছে এসব সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাঁদা আদায় করা হয় খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ১৪০ কোটি টাকা। রাঙামাটি থেকে ১২৯ কোটি টাকা। বান্দরবান থেকে ১২২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এসব জেলা থেকে অন্তত ৩৭৫ কোটি টাকার চাঁদায় করেছিল এসব সংগঠন। অথচ জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী চাঁদা আদায়ের ঘটনা কমেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সেটা পুরোই বিপরীত। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে এ অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। এ ছাড়া চাঁদাবাজির ঘটনাও কমেছে বলে তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে জেলার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবিরও একই দাবি করেন। 

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সঙ্গে দেখা করতে রাঙামাটি শহরে তার অফিসে গেলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত সহকারী কল্যাণ চাকমা বলেন, সংবাদ সম্মেলন ছাড়া তিনি কখনো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন না। এটা আমাদের পার্টির উচ্চপর্যায় থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

লেখক : মানিক মুনতাসির, পার্বত্য এলাকা থেকে ফিরে

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·    পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]