বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

পাহাড়ে বঞ্চিত বাঙ্গালী এবং বহুমুখী ষড়যন্ত্র'

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও এখানে যেমন বহু সম্প্রদায় রয়েছে তেমনি এই স্থানটুকু নিয়েও চলছে বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র। এই বিষয় নিয়ে স্থায়ী কোন পরিকল্পনা নাই, যাতে এই সমস্যাগুলোর কোন সমাধান করা যায়। বাবার বখাটে সন্তান যেমন করে থাকে, বেশি অসহ্য না হলে যেমন সন্তানের প্রতি বাবার কোন ভূমিকা থাকে না অনেকটা তেমন। এই বহুমাত্রিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা জাতীয় দুই দলের কারও নেই। যখন কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন সরকার একটু নড়াচড়া করে মাত্র। এই সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা যাদের জন্য কাজ করেছে তারা মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই স্থানে বসবাসকারী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী এবং উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার প্রচুর পার্থক্য বিদ্যমান। উপজাতী ও বাঙ্গালীদের মাঝে বর্তমানে যে বৈষম্য রয়েছে তা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশি ও বিদেশি এনজিও, সরকারি অফিস হতে সুযোগ সুবিধা পেতে বাঙ্গালীরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে।

 বিদেশি মদদপুষ্ট এনজিওগুলো নানা কৌশলে বাঙ্গালীদের বাদ দিয়ে শুধু উপজাতীয়দের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বাঙ্গালীদের বাদ দেয়ার জন্য প্রত্যেকটা কর্মসূচির প্রফাইল তৈরির সময় এমন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাতে প্রকল্পের জন্য তৈরি করা নিয়োগে বাঙ্গালীরা উন্নয়ন ক্ষেত্রের বাইরে পড়ে। যেমন শহর বা উপজেলা সদর হতে কমপক্ষে ৪-৫ কিমি দূরে অবস্থানকারী জনগণকে সেবার কথা আগেই নির্ধারণ করে পিপি তৈরি করে নেয়া হয়। বাঙ্গালীরা সাধারণত শহর ও শহরতলী এবং উপজেলার আশপাশে অবস্থান করে নিরাপত্তার কারণে (উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কারণে পাহাড়ের ভিতরে কোন বাঙ্গালী বসতি করতে পারে না) উপজাতীয়রা শহর, গ্রাম, জঙ্গল সর্বত্র বিচরণ, সম্পদ আহরণ, চাষাবাদ, সব করতে পারলেও বাঙ্গালীরা সেখানে স্থায়ীভাবে প্রবেশাধিকার হতে বঞ্চিত। জঙ্গলে তাদের বরাদ্দকৃত জমিতে তারা যেতে পারে না।

সরকারি প্রশাসন শুধুমাত্র শহর ও শহরতলীতে সক্রিয় বাঙ্গালীদের অপরাধ দমনে, উপজাতীয়রা যা কিছু করুক সরকারের পেনাল কোড অচল। এ যাবৎ পাহাড়ে অসংখ্য খুন হয়েছে এমন একটি নজিরও নেই যে তার বিচার হয়েছে। মামলা হয়েছে সরকারি পুলিশ আসামিকে ধরার জন্য২-১ মাস, তৎপর থাকলেও পরে সেই সব খুনের আসামি দিব্য প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। বিচার, আইন এইসব বিষয় এখানে শুধু কেতাবের বিষয়। মূলত: পার্বত্য চট্টগ্রাম চলে আল্লাহুর ওয়াস্তে। প্রতিটা বাঙ্গালী এখানে উপজাতীয়দের কাছে জিম্মি। পুলিশ বাহিনী, সামরিক বাহিনী তাদেরকেই তোয়াজ করে চলে। অনেকটা মেজবানের ঘরের মেহমানের মতো।

যে সমস্ত বাঙ্গালী এখানে রয়েছে তারা যে যেমন করে পারছে আখের গুছাতে ব্যস্ত। তারা কেউ এইভূমি নিয়ে বিজ্ঞতার সাথে চিন্তা করে না। তলা ছিদ্র জাহাজের যাত্রী যেন তার কেবিন ঠিক করাতে ব্যস্ত, অথচ সেই নির্বোধ জানে না-জাহাজ ডুবে গেলে তার কেবিন তাকে রক্ষা করতে পারবে না। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তাদের বাঙ্গালী নেতা ও উপজাতীয় নেতারা যোগ হয়ে লুটপাট চালায় মনে করে আমরা এই এলাকার বাদশা। নিরীহ উপজাতীয় জনগণকে পুঁজি করে উপজাতীয় নেতারা শুধু অপেক্ষায় আছে সেই সময়ের জন্য যেদিন তারা তাদের প্রভুদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেখবেন। এই বাঙ্গালীদের ঘরবাড়ির বাগান, জমি সব যে এক সময় তাদের সম্পদ হবে নেতারা ভাল করেই জানে। ৫০ ভাগ বাঙ্গালীর মধ্যে মাত্র ৩-৪ ভাগ বাঙ্গালীর শেকড় রয়েছে বাকি সব তো শহরতলীতে শেকড়হীনভাবে রয়েছে, তাদের উৎখাত করার তাদের প্রভুকে দিয়ে বাস্তবায়ন করা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। পূর্ব তিমুর, দক্ষিণ সুদান, ফিলিপাইন এসব জায়গার অবস্থা পূর্বে এই পাহাড়ের মতই ছিল। ঐসব বিচ্ছিন্ন দেশকে নিয়ে মূলে দেশের অধিবাসী এবং সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা ছিল না এবং শাসক দলের দুর্নীতি সবকিছুর সাথেই বাংলাদেশের যেখানে ১০০ ভাগ মিল রয়েছে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নেতাগণের প্রভুদের ভিন্নভাবে চিন্তার কি কোন প্রয়োজন আছে? উল্লেখ্য, পাহাড়ে মোট উপজাতীয়দের খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত জনগোষ্ঠীর হার বর্তমানে ৪০ ভাগের উপরে। মিশনারীগণ জানে যে, বিভিন্ন সুযোগ প্রাপ্তির জন্য বর্তমান দীক্ষিত জনগণ জাত খৃস্টান না হলেও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম নামে ও কৃষ্টিতে এবং মননে ৯৫ ভাগ খৃস্টান হিসেবে তারা ঠিকই পাবেন এবং এ কারণে এদেরকে দিয়ে বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন করার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

পাহাড়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীরা দীর্ঘকাল তাদের ভূমি হতে বঞ্চিত হয়ে কলোনীতে বসবাস করতে করতে তাদের মানসিকতা আজ সর্বনিম্ন পর্যায়ে, তারা হারিয়ে ফেলেছে স্বাধীন চিন্তা, দয়া নির্ভর জীবন যাপন, হারাচ্ছে দর্মীয় মূল্যবোধ, অমানবিক মূল্যবোধ অর্জন করেছে, মানবিক আচরণ, হিংসা, অপরাধপ্রবণতা, আপাতত: প্রাপ্তির প্রশান্তি। স্থায়ীভাবে আত্মমর্যাদা নিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হওয়া তাদের মাথা হতে নির্বাসিত। তাদের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি খাসভূমিতে তাদের পুনর্বাসন করার দায়িত্ব সরকারের, সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে সাহস পায় না। এর অর্থ এটা কি প্রমাণ করে না এই এলাকাতে সরকারের অবস্থান কি পর্যায়ে রয়েছে? সরকারের অবস্থানে ক্ষমতায় যেসব নেতা নেত্রী রয়েছেন, তারা নির্লোভ হলে পাহাড়ে সরকারের অবস্থান, বাঙ্গালীদের মেরুদন্ড অনেক শক্ত হতো। দেশ বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি হ্রাস পেতো। ভূমি কমিশন বাস্তবায়ন উপজাতীয় নেতারা চাচ্ছেন না, নানা বাহানা দেখাচ্ছেন এর পেছনে একটি উদ্দেশ্য পাহাড়ের সমূদয় খাসভূমি ইউএনডিপির অর্থে পরিচালিত উপজাতীয় এনজিওদের মাধ্যমে স্থানীয় উপজাতীয়দের দ্বারা বাগান তৈরি করা। চাষাবাদ করে তাদের দখল প্রতিয়মান করার পর ভূমি কমিশনকে তারা স্বাগত জানাবে। আর খাসভূমি প্রথম দখলকারী হিসেবে মালিকানা দাবি তখন আইনগতভাবে অঙ্গীকার করার উপায় থাকবে না।

বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের তার অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও পাহাড়ে বাঙ্গালীরা সামাজিক, মানসিকসহ সবক্ষেত্রে সমঅধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি এবং এনজিও প্রতিটি ক্ষেত্রে। ইউএনডিপি চরমভাবে তার মাতৃপ্রতিষ্ঠান ইউএনও এর সনদ লঙ্ঘন করছে। উপজাতীয়দের থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা স্থানীয় বাঙ্গালীদের জন্য উন্নয়নমূলক কাজে পক্ষপাতিত্ব করছে। উপজাতীয়দের মতো ইউএনডিপিও মনে করে বাঙ্গালীরা এখানের জনগণ নয়। অথচ এখন পর্যন্ত এই পাহাড় বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এখানকার সব নাগরিকই বাংলাদেশের নাগরিক। ইউএনডিপি যেখানে মানুষের জন্য কাজ করবে, সেখানকার সব মানুষকে হিসাবে আনতে হবে তা না করে বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য কাজ করবে যদিও তারা তুলনামূলক ভাল অবস্থানে থাকার পরেও, এটা পক্ষপাতদুষ্ট জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী। সরকারের উচিৎ পার্বত্য এলাকার সব জনগোষ্ঠীর জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করা, মানুষের মধ্যে নৃতাত্বিক বিভাজন সৃষ্টি না করা। সমতলে ইউএনডিপির কাজ হিন্দু, মুসলমান ও খৃস্টান যদি ভিন্নতা না হয়, তাদের এখানে কেন বিশেষ গোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করবে? বাঙ্গালীরা পাহাড়ে সব থেকে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী এই পরিসংখ্যান ইউএনডিপি ভাল করেই জানে তবুও তারা তাদের নিয়মনীতি নিজেরাই ভঙ্গ করছে এবং উক্ত এনজিও প্রতিষ্ঠান বহু আগেই স্বচ্ছতা হারিয়েছে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর উপরই উক্ত প্রতিধ্বনি কিছু খবরদারী করতে পারে। এছাড়াও পাশ্চাত্য জগৎ উক্ত প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে রেখেছে, সরকার বিভিন্ন কারণে জাতিসংঘের অনেক কিছু মানতে বাধ্য হয় বটে তবে, রাজনৈতিক তাদের স্বচ্ছতা, সততা থাকলে বর্তমান বাংলাদেশ যদি দুর্নীতি রুখতে পারে, তাহলে নিজস্ব সম্পদ দিয়েই দেশের উন্নয়ন সম্ভব, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে এর চাপ এড়ানো কোন কঠিন কাজ নয়।

পরিশেষে বাংলাদেশ তার প্রতিটি ইঞ্চিভূমি রক্ষার ব্যাপারে সংবিধান মোতাবেক পদক্ষেপ নিলে সাংবিধানিকভাবেই সংখ্যালঘু জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ আইন পাহাড়ে বলবৎ রাখতে হবে এমন কোন যুক্তি নাই, সরকার সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ের প্রতিটি নাগরিককে সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে সচেষ্ট হবেন, এই প্রত্যাশা পাহাড়ের বাঙ্গালী অধিবাসীদের। এই ভূখন্ড বাংলাদেশেরই অংশ, এর অখন্ডতা রক্ষার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে অবশ্যই সচেতন করে তোলা সরকারেরই উচিৎ।

সকল বৃহত্তর পার্বত্যবাসী, সাধারণ নিরীহ, সচেতন দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে- এম জেড আলম

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]