সবুজের অরণ্যঘেরা পাহাড়ে অবৈধ ভারি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরকের মজুদ বাড়ছে উদ্বেগজনক ভাবে। এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসকারীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ে এবং মাঝেমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের লড়াইয়ে। মর্টার শেল, রকেট লঞ্চার, একে-৪৭, একে-২২, এসএমজি, এলএমজিসহ বিভিন্ন জাতের বিপুল পরিমাণ ভারি অস্ত্রের ভান্ডার এদের নিয়ন্ত্রণে। পাহাড়ের বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ‘সদক’ ও ‘জেএনএ’ (জুম্ম ন্যাশনাল আর্মি) নামের পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের এ দুটি সংগঠন নিজেদের গেরিলা সংগঠন বলে দাবি করে থাকে। সীমান্তের ওপারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এরা দেশের অভ্যন্তরে ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ ক্রমাগতভাবে গড়ে তুলছে। ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির পক্ষে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) অন্তর্কোন্দলের কারণে বেরিয়ে যাওয়া গ্রুপটি সদক ও শান্তি চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ (ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) জুম্ম ন্যাশনাল আর্মি (জেএনএ) সহিংস তৎপরতার পথ নেছে নেয়ায় এরা অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ গড়ে তুলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ইতোপূর্বে যে অস্ত্রের চালান আসত তা ব্যাপকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন নতুন রুট হয়েছে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবান সংলগ্ন বিভিন্ন স্পট। সীমান্ত গলে অরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে এসব অস্ত্রের চালান পৌঁছে যাচ্ছে দেশের সীমানা অভ্যন্তরে। মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবান সংলগ্ন অরক্ষিত একাধিক পয়েন্ট দিয়ে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা সংগ্রহ করে নিচ্ছে এসব ভারি অস্ত্রশস্ত্র। ওইসব স্পট মূলত অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনার এক ধরনের হাট এবং মাদকসহ বিভিন্ন চোরাচালানি পণ্যের রুট।
সূত্র জানায়, বান্দরবানের রুমা, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সম্প্রতি ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সদস্যসহ ৩ জন গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার এবং সর্বশেষ গত সোমবার দীঘিনালার নৌকাছড়িতে বিপুল অস্ত্রসহ এক পাহাড়ী সন্ত্রাসী গ্রেফতারের ঘটনায় প্রমাণ করে পাহাড়ে অস্ত্রের ছড়াছড়ির বিষয়টি।
নিরাপত্তা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, জেএসএস সন্তু গ্রুপ, জেএসএস-এমএন লারমা গ্রুপ ও ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা সদক ও জেএনএ নামে সশস্ত্র তৎপরতা পাহাড়ে নতুন করে অশনি সঙ্কেত দিচ্ছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীও থেমে নেই। সন্দেহজনক সম্ভাব্য স্থানগুলোতে নিয়মিতভাবে চালানো হচ্ছে অভিযান। কোন কোন স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে চলে চিরুনি অভিযান। তবে এসব সন্ত্রাসীর ঘাঁটি ও অস্ত্রের মজুদ পাহাড়ের এত গভীর অরণ্যে যে সহজে এর সন্ধান মেলানো কষ্টসাধ্য। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে ওইসব পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিধেয় পোশাক। গত মাসে বাঘাইছড়িতে বন্দুকযুদ্ধে যে ৫ পাহাড়ী সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং গত সোমবার রাতে দীঘিনালায় গ্রেফতারকৃত পাহাড়ী সন্ত্রাসী ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পোশাকে।
নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে, মূলত চাঁদাবাজি ও অপহরণ তৎপরতা চালিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে এদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন পাহাড়ী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও অপহরণ তৎপরতায় লিপ্তদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, সরকার পাহাড়ের উন্নয়নে এবং পাহাড়ীদের জীবনযাত্রার মান সমতল এলাকার অধিবাসীদের মতো করতে যত প্রয়াস, উদ্যোগ ও তৎপরতা গ্রহণ করে চলেছে ততই এরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাঙ্গামাটি শহরে একটি সরকারী মেডিক্যাল কলেজ চালু করার শুরুতে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় তা ছিল শান্তি চুক্তি বিরোধী ও পক্ষের শক্তিগুলোর অভিন্ন চিন্তার প্রতিফলন। এদের চিন্তা ধারায় রয়েছে পাহাড়ে বাঙালীদের সংখ্যা কোনভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাহাড়ীরা সমতলে যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে, বাঙালীরা অনুরূপ সুযোগ সুবিধা যাতে না পায় সে লক্ষ্য নিয়ে পাহাড়ী এসব সংগঠনগুলো অতি তৎপর।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে সব ধরনের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য বন্ধ ও অস্ত্রবাজির অবসানের ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতি ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হলেও এখনও পাহাড়ে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। শান্তি আসছে না পার্বত্য জনপদে। অব্যাহত রয়েছে বেপরোয়া সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, উন্নয়ন কাজে বাঁধা প্রদান, চাঁদাবাজি ও নাশকতামূলক কর্মকা-।
পাহাড়ী-বাঙালী সমাজে নানা রকমের অসন্তোষ ছাড়াও পাহাড়ী-পাহাড়ী দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিত্রও ক্রমেই বাড়ছে। আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিবদমান দুটি গ্রুপ এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ-এ তিনটি গ্রুপ পরস্পরের প্রতি সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক, যা মাঝেমধ্যে সশস্ত্র সহিংসতায় পরিণত হয়। সুযোগ পেলেই এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর হামলে পড়ছে। এদের মধ্যে প্রতিনিয়ত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। আর এসব ঘটনা ঘটার পর এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করা যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অথচ পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি স্পষ্ট হলেও সব গ্রুপই অস্ত্র ব্যবহারের কথা বরাবরই অস্বীকার করে থাকে।
সম্পাদিত শান্তি চুক্তির শর্তানুযায়ী তৎকালীন শান্তি বাহিনীর ১৯৪৭ জন সদস্য অস্ত্রশস্ত্র জমা দিয়ে যেমন প্রমাণ করেছিল তাদের ভা-ারে অস্ত্রের কমতি ছিল না, তেমনি আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর তিনটি গ্রুপের সশস্ত্র সংঘাত প্রমাণ করছে এখনও তাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্রের ভা-ার রয়েছে। এবং সে ভা-ারে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন আরও অস্ত্র। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদুর গহীন অরণ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ ভারি অস্ত্র ইতোমধ্যে এর প্রমাণ দিয়েছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তি বাহিনীর ১৯৪৭ জন সদস্য, সহস্রাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও চুক্তির পরবর্তী ১৮ বছরেও পাহাড়ে অস্ত্রের সহিংস তৎপরতার অবসান ঘটেনি। বরং চুক্তির পক্ষ ও বিপক্ষের সমর্থকরা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সাধারণ মানুষকে রীতিমতো জিম্মিদশায় বন্দী করেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, শান্তি চুক্তি ও অস্ত্র সমর্পণের পর শান্তি বাহিনীর বহু সদস্য তাদের গোপন আস্তানা থেকে ফিরে আসেনি। এরা পরবর্তীতে শান্তি চুক্তিকে পাহাড়ী জনগণের বিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুনভাবে সদস্য সংগ্রহ করে সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। শান্তি চুক্তির পর শান্তিবাহিনী বিলুপ্ত হওয়ায় এখন নতুন নাম দেয়া হয়েছে সদক। এর পাশাপাশি জেএসএস সন্তু বিরোধী গ্রুপ ইউপিডিএফ তাদের সামরিক উইংয়ের নাম দিয়েছে জুম্ম ন্যাশনাল আর্মি (জেএনএ) যার অনেকটা মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে সাযুজ্য রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী খাগড়াছড়ির দিঘীনালা, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও পানছড়ি, রাঙামাটি জেলার নারাইছড়ি, কাপ্তাই, রাজস্থলী, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার গহীন অরণ্যে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি গড়ে উঠছে। অপরদিকে, বান্দরবানের থানচি এলাকার সীমান্তেও ওপারে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর অবস্থান। জানা গেছে, সদক ও জেএনএ’র সঙ্গে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্ক রয়েছে। উভয় দেশের এসব সন্ত্রাসীরা নিজেদের স্বার্থে কখনও এক হয়ে কখনও বিচ্ছিন্নভাবে অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়।
শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর হতে বিভিন্ন সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিডিআর ও পুলিশ। শান্তিবাহিনী যে পরিমাণ অস্ত্র জমা দিয়েছিল তার চেয়ে বহুগুণ বেশি অস্ত্র এখনও এসব সন্ত্রাসীর মজুদে রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে।
সূত্র মতে, সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় তাদের সদস্যদের অস্ত্র ও গেরিলা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এরা মিয়ানমারের আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পেয়ে থাকে। এছাড়া অস্ত্রের অর্থের যোগান দিতে তিন পক্ষই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন কাঠ ও বাঁশ ব্যবসায়ী, দোকানদার, ঠিকাদার, যানবাহন মালিক ও চালক, ইটভাঁটির মালিক, এমনকি জুম চাষীদের উৎপাদিত পণ্য হতেও মোটা অঙ্কের ধার্যকৃত চাঁদা আদায় করছে। আর এ বিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রামের ওপেন সিক্রেট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদা আদায় করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীরা।
মোয়াজ্জেমুল হক ও জীতেন বড়ুয়া, দৈনিক জনকণ্ঠ।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]