মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭

বেদে, চাকমা ও অনগ্রসর অংশের ৫% কোটার কথামালা!

উৎসবে আধুনিক পোশাকে চাকমার তরুণিরা
বাংলাদেশের দলিত ভূমিহীন অন্তজ অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্ভবত প্রথম সারিতে পড়বে "বেদে"রা এবং মালো "জলদাসরা"। জলেভাসা এদের জীবন। এদের না আছে বাড়িঘর, না আছে যায়গা জমি, না আছে কোন ভবিষ্যত। ঝড়জলে সারাবছর নৌকোতে জীবন কাটায় এরা। এদের সন্তানদের জন্য কোন ভাসমান স্কুল নেই নদীতে। নৌকোতে যাযাবর জীবন যাপনের কারণে, সম্ভব নয় তাদের সন্তানদের স্থলভাগের স্থায়ী স্কুলে পড়ানো। তাদের জন্য কোন ভাসমান হাসপাতাল নেই জীবনতরীর মত। তাই সরকারি কোন চিকিৎসা পায়না এ ভ্রাম্যমান যাযাবর জাতি। যদিও তারা বাঙালি এবং এ দেশের নাগরিক। এরা কি এদেশের ভোটার? না যাযাবর জীবনের কারণে ভোটার নয় তারা। মোদ্দা কথা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কোন সুবিধাই পায়না তারা। এদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি (ঐ বেদেসহ) আর ২% অবাঙালি। যার মধ্যে উপজাতি, বিহারী, রোহিঙ্গা ইত্যাদি। বিহারী, রোহিঙ্গা বাদ দিলে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হার ১.২% মাত্র।
জলে বেদেদের ঘর বাড়ি
সংবিধানের ২৯ (১) ও (২) অনুচ্ছেদ বলে, "প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে" এবং "কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেইক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না"। যদিও সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, "নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন "অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য" বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না"! এখন বিবেচ্য বিষয় সংবিধানে বর্ণিত এ "অনগ্রসর শ্রেণি" কে বা কারা? পৃথিবীর সব দেশেই সমাজে যারা পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর, তাদের সামনে নিয়ে আসতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকে। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। কারণ আমাদের দেশে মহিলা ও উপজাতিরা (এবং এই বেদেরা) সমাজে এখনও অনগ্রসর। 
চাকমা রাজার বিয়ের অনুষ্ঠান
আমরা যদি উপরে বর্ণিত "বেদে" এবং বাংলাদেশের পার্বত্যজেলাগুলোতে অবস্থানরত "চাকমা" উপজাতির দিকে তাকাই, তাহলে বিশাল শুভংকরের ফাঁকটা ধরা পড়বে। বাংলাদেশে সার্বিক বিচারে মোট জনসংখ্যার ১.২% উপজাতি হলেও, তাদের জন্যে কোটা নির্ধারিত আছে ৫%। এটা কোনক্রমেই ১.২% এর বেশি হওয়া উচিত নয়। এরমধ্যে উপজাতি ৫% কোটার ৯০% আবার হাতিয়ে নেয় চাকমারা। সাঁওতাল বা এ জাতীয় উপজাতিরা ক'টা আসন পায় তা গবেষণার বিষয় বটে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মরত ইউএনডিপির বড় থেকে ছোট সকল কর্তাই চাকমা সম্প্রদায়ের। তা ছাড়া অনেক চাকমা নানাভাবে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপে বসবাস করছে। আর যে কেন বিচারে সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে বর্ণিত "অনগ্রসর শ্রেণি" বলতে কেবল উপজাতি বোঝাবে কেন? অবশ্যই উপজাতি বিশেষ করে চাকমা উপজাতির চেয়ে "বেদে" ও "মালো জলদাস"রা অনেকটাই "অনগ্রসর শ্রেণি"। 
বেদেদের জীবন চিত্র জলে
তথ্য নিলে দেখা যাবে, চাকমাদের মধ্যে মেজর জেনারেল, রাষ্ট্রদূত, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ইত্যাদি অনেক বড় বড় পদে কর্মরত তারা। ৯৮% বাঙালির চেয়ে জনসংখ্যা অনুপাতে অনেক বেশি সরকারি পদে কর্মরত বর্তমানে চাকমারা এখন। যদিও সাঁওতাল উপজাতিরা খুব কম সরকারি পদেই কর্মরত আছে। তা ছাড়া বেদে বা মালো জলদাসদের কোন সন্তান ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ বা প্রশাসনে কখনো চাকুরি পেয়েছে, তা কখনো শুনিনি বা জানিনা আমি। সুতরাং ২০১৭ সনে চাকমারা কখনোই সংবিধানের ২৮ (৪) অনুচ্ছেদে বর্ণিত "অনগ্রসর শ্রেণি" নয়। চাকমাদের "অগ্রসর শ্রেণি" গণ্য করে, কোটা থেকে তাদের নাম বাদ দিয়ে সেখানে বেদে ও মালো জলদাসদের অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবী। তা ছাড়া সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘অনগ্রসর অংশের’ কোটা সমর্থন করে (যা কিনা নারী ও উপজাতি) কিন্তু কখনই ‘অনগ্রসর অঞ্চল’ সমর্থন করে না। তাই এটা হওয়া উচিত পুরো বাংলাদেশে। মানে যেখানে দলিত অনগ্রসর শ্রেণি সেখানেই প্রযোজ্য হবে এ কোটা, কেবল পার্বত্য জেলাতে কেন? কেন ভাসমান জেলদের জন্য সমতলের নদীতে নয়?
জলপুজারত চাকমা তরুণি
এ দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বেদে সম্প্রদায়। হাজার বছর ধরে বাংলা সংস্কৃতির একটি উপাদান হয়ে রয়েছে বেদে সম্প্রদায়। বিশেষ করে "ময়মনসিংহ গীতিকা"য় বেদে সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের হিসাবে, সারাদেশে তাদের সংখ্যা প্রায় ৬৩ লাখ। যাদের মধ্যে দলিত প্রায় ৪০ লাখ ও হরিজন ১৩ লাখ। অঞ্চলভেদে বাংলাদেশে তারা বাদিয়া, বেদিয়া, বাইদিয়া, বেদে, বেদেনি, বাইদ্যা, বাইদ্যানি, সাপুরে ইত্যাদি নামে পরিচিত। বেদেদের আদি নাম মনতং। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক বাইদ্যা (হাতুড়ে ডাক্তার), পরিমার্জিত ‘বৈদ্য’ (চিকিৎসক) থেকে উদ্ভূত। বাংলাদেশের বেদেরা মোট নয়টি শাখায় বিভক্ত। এগুলি হলো লাউয়ো বা বাবাজিয়া, চাপাইল্যা, বাজিকর, বেজ বা মিচ্ছিগিরি, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল এবং সাপুড়িয়া। লাউয়ো বেদে বা বাবাজিয়ারা জাল ও বড়ঁশি দিয়ে মাছ ধরে। গাইন বেদেরা সুগন্ধি মশলা বিক্রয় করে। চাপাইল্যা বেদেদের (সাজদার) পেশা হচ্ছে বিষ-ব্যথা নিরাময়কারী মাছের কাঁটা, বাঘের থাবা ও পাখির হাঁড়ের মালা বিক্রয়। বাজিকর বেদেরা (মেল্লছ) শিয়ালের হাড় ও ধনেশ পাখির তেল বিক্রয় করে। শিয়াইল্যা বেদেরা সর্বভুক বলে অন্য বেদেদের সাথে তাদের লেনদেন হয় না। এরা গরু, শূকর, সাপ খায় এবং হিন্দু দেবদেবীর উপাসনা করে। বাংলাদেশের বেদেরা এদেশেরই নাগরিক। ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা তাদের প্রাপ্য। বাংলাদেশে এরা বরাবরই ক্রমহ্রাসমান একটি বঞ্চিত দলিত জনগোষ্ঠী। 
নৌকোতে এক বেদে তরুণি
সুতরাং প্রত্যেকটি যুক্তিবাদী মননশীল মানুষের বোধে আনতে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বরাদ্দকৃত ৫% কোটা কি চাকমাদের মত উন্নত উপজাতিদের প্রাপ্য? নাকি দলিত, সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত ভূমিহীন বেদেদের প্রাপ্য? বেদে সম্প্রদায় ও চাকমা সম্প্রদায়ের ছবি দেখেই তুলনা করা যায়, দুই সম্প্রদায়ের অনগ্রসর শ্রেণি কারা?

জাহাঙ্গীর হোসেন


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]