সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭

টার্গেট আ’লীগের পাহাড়ি নেতাকর্মীরা !

জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত পাহাড়িরা টার্গেটে পরিণত হয়েছে। এবার সরাসরি খুন, হামলার মাধ্যমে তাদের জাতীয় রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার প্রতিনিয়ত হুমকি চলছে। ইতোমধ্যেই কয়েক উপজেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত পাহাড়িদের দলত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। জনসংহতি সমিতির নিজেদের শক্তিশালী ও নিজেদের দলকে পাহাড়িদের একমাত্র ‘প্লাটফর্ম’ করার চিন্তা থেকেই এমন চিন্তাভাবনা বলে জানা গেছে। গত ৫ ডিসেম্বর জুরাছড়িতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন বিলাইছড়িতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার ওপর হামলা করা হয়। এই দুই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরেরদিন ৬ ডিসেম্বর রাঙামাটি শহরে জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ঝর্ণা খীসা। সমাবেশে বক্তব্য রাখার জন্য ওই রাতেই ঝর্ণা খীসার নিজস্ব বাসভবনে ঢুকে হামলা চালানো হয়। এতে ঝর্ণা খীসাসহ পরিবারের আরো তিন সদস্য আহত হয়। বর্তমানে ঝর্ণা খীসা চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব ঘটনায় হামলার শিকার ব্যক্তি ও দল আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে সরাসরি জনসংহতি সমিতিকে দোষারোপ করা হয়। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় ১৯জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির দু’দশক পূর্তি অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই হঠাৎই পাহাড়ে আবারো হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাজনীতি অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মূলত আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত পাহাড়িদের এই ক্ষেত্রে মূল টার্গেট হিসেবে ধরা হয়েছে বলে আওয়ামীলীগের অভিযোগ। গত কয়েকদিনের হত্যা কিংবা হামলায় সে বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের বাইরে জাতীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত পাহাড়িদের ক্ষেত্রে একই আচরণ লক্ষ্য করা যায়নি।

পাহাড়িদের একমাত্র রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘জনসংহতি সমিতি’, এই বিষয়টিকে সামনে রেখে জনসংহতি সমিতি নিজেদেরকে পুনরায় শক্তিশালী করার জন্য মাঠে নেমেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির দু’দশক পার হয়েছে। চুক্তির বর্ষপূর্তিতে আওয়ামীলীগ ও জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছে। আওয়ামীলীগ থেকে চুক্তির সিংহভাগ বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও জনসংহতি সমিতি বলছে চুক্তির এক তৃতীয়াংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এতে আবার মৌলিক বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে সরকার। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সন্তু লারমা অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বরে আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দকে হত্যা ও হামলার ঘটনা বেশ সঙ্গতিপূর্ণ বলে দাবি আওয়ামীলীগ নেতাদের। তাদের দাবি, মূলত আওয়ামীলীগকে পাহাড়িশূন্য ও দীপংকর তালুকদারকে বেকায়দায় ফেলতে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়িদের হত্যা ও হামলার মাধ্যমে তাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দলটির দাবি, জনসংহতি সমিতি পাহাড়ে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রধান বাধা দীপংকর তালুকদার। তাইতো দীপংকর তালুকদার যাতে কোনভাবেই পাহাড়িদের সাথে নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে সেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে জনসংহতি সমিতি। এছাড়া জাতীয় দলগুলোর সাথে যেভাবে পাহাড়িরা সম্পৃক্ত হচ্ছে এতে জনসংহতি সমিতির শক্তিও দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলে ভীত হয়ে তারা পাহাড়িদের টার্গেটে পরিণত করেছে। অসহযোগ আন্দোলনের ১০ দফার মধ্যে অন্যতম একটি হলো পাহাড়িদের মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ও চুক্তি বিরোধিতাকারীদের সর্বত্রই বয়কট করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়িদের জাতীয় রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি, হামলা ও হত্যা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে আওয়ামীলীগ।

অন্যদিকে জনসংহতি সমিতিও মনে করছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের কয়েকজন নেতার জন্য চুক্তি বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।। পাহাড়িদের একমাত্র সংগঠন হিসেবে আন্দোলন জোরদার করতে না পারায় চুক্তির ২০ বছর পরও মৌলিক বিষয়গুলো সমাধান করতে পারেনি বলে মনে করছে জনসংহতি সমিতি। এছাড়া আওয়ামীলীগের মধ্যে পাহাড়ি কয়েক নেতার কারণে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছে জনসংহতি সমিতি। তবে হত্যা কিংবা হামলা, হুমকির সাথে জড়িত নয় বলে দলটি দাবি করেছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, আওয়ামীলীগ পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজনীতি করে। কিন্তু জনসংহতি সমিতি সম্প্রীতি নষ্টের রাজনীতি করে। তাই তো তাদের ওপর মানুষের সমর্থন নাই দেখে তারা হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আওয়ামীলীগে যেসব উপজাতীয়রা রাজনীতি করছে, তাদের দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হচ্ছে দেখে এবং তাদের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এই কারণে জনসংহতি সমিতি পাহাড়িদের টার্গেট করেছে। তিনি বলেন, মূলত সামনেই জাতীয় নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে যাতে সাধারণ জনগণ আওয়ামীলীগের পক্ষে থাকতে না পারে সেজন্য এধরনের অপকৌশল বেছে নিয়েছে তারা। তবে দুই একজন যারা পদত্যাগ করেছে তাদের পদত্যাগে আওয়ামীলীগ ভীত নয় কিংবা তারা কোন পদে আছে এমনও নয়। আওয়ামীলীগ অনেক বড় সংগঠন।

জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বর বলেন, জেএসএস আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিশেষ করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী যারা আওয়ামী লীগ সংগঠনের সাথে জড়িত, তাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। যেন আওয়ামী লীগ সংগঠন না করে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মত ঘটনাও একাধিক বার ঘটেছে। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই বলে জনসংহতি সমিতির অস্ত্রের রাজনীতির করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জুরাছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দু চাকমাকে হত্যার পর সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে জুরাছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবর্তক চাকমা বলেন, ‘জুরাছড়ি উপজেলা এক সময় জেএসএস এর ভোট ব্যাংক ছিল। সাধারণ মানুষ এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে। তাদের ভোট কমে যাওয়ার ভয়ে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখাতো। ৭ ডিসেম্বর অরবিন্দু চাকমার বাসায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদারের দুপুরের খাবারের দাওয়াত ছিল। এর আগেই মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে উপজেলার সুবলং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পানির ব্যবস্থার জন্য সিঁড়িতে ওঠার সময় কিছু মুখোশধারী লোক তাকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। জুরাছড়িতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য জেএসএস এই কাজ করেছে। অরবিন্দু চাকমা ডিশ লাইনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। তার কোনও ব্যবসায়িক শত্রু নাই। আওয়ামী লীগ করার কারণেই জেএসএস তাকে হত্যা করেছে।’

এ বিষয়ে জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার সাথে রোববার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, আপাতত এ নিয়ে আমরা আর কিছু বলতে চাই না।’ তবে অরবিন্দু চাকমাকে হত্যা, রাসেল মারমা ও ঝর্ণা খীসার ওপর হামলার পর সংবাদমাধ্যম থেকে সজীব চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আওয়ামী লীগের তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এখানে জনসংহতিকে দায়ী করা ঠিক না। এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]