রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

ইতিহাসের অন্তরালে থাকা এক রাজাকারের গল্প : প্রসঙ্গ ত্রিদিব রায়

পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর ৫০তম রাজা ত্রিদিব রায় এর জন্ম ১৪ মে ১৯৩৩ সালে। বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজা হওয়া এই মানুষটার জীবনী পড়লে আপনি চমকে উঠবেন। চরম পাকিস্তানপন্থী একজন মানুষ কিভাবে বাংলাদেশের একটি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান হয়, এই ভাবনা আপনাকেও ভাবাবে!১৯৫৩ সালের ২ মে থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি রাজা ছিলেন চাকমা জনগোষ্ঠীর। বর্তমান রাজাও তারই সন্তান দেবাশীষ রায়। যে কিনা আবার নিজের স্বার্থে জন্যে সাধারণ উপজাতিদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়ে বাংলাদেশের ভিতরেই প্রতিষ্ঠা করতে চায় জুম্মল্যান্ড নামক আরেক স্বাধীন দেশ! রাজা ত্রিদিব রায়ের কর্ম জীবন সবটাই পাকিস্তান সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এই কথিত রাজা ছিলেন পাকিস্তানের জন্যে নিবেদিত প্রাণ, এমনকি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও কেবল রাজাকারি নয়, রাজাকারদের শিরোমনি ছিলেন ত্রিদিব রায়।কর্ম জীবনে তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি আর্জেন্টিনায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। অতি পাকিস্তান প্রীতির কারণে পাকিস্তান সরকার তাকে আজীবন মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় ছিলেন ত্রিদিব রায়। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে ত্রিদিব রায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সম্মানসূচক কমিশন লাভ করেন। তিনি পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের অনারারি এইড-ডি-ক্যাম্প নিযুক্ত হন। পূর্ব পাকিস্তানে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এই সম্মান লাভ করেছিলেন। অন্যান্য জনপ্রিয় বাঙালিদের বদলে তাকে এই সম্মান প্রদান করাটাও ছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এক প্রকার উপহার। কারণ রাজা ত্রিদিব বরাবরই তার প্রজাদের পাকিস্তানপন্থী করতে চাইতেন।


১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির প্রাণের দাবি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। ত্রিদিব রায় এই কর্মসূচির সমর্থক ছিলেন না। রাজা ত্রিবিদ রায়ের প্রতারণার এই শেষ নয়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাদের সাথে ত্রিদিব রায়ের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। তিনি বাঙালিদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতেন, যাতে তারা বাঙালিদের দুর্বল দিকগুলো থেকে আক্রমণ করতে পারে। যুদ্ধকালীন সময়ে মে মাসে তিনি রিজার্ভ বাজার এবং তবলছড়ি বাজারে জনসভায় ভাষণ দেন। এসব জনসভায় তিনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বাঙালিদের বিজয় নিশ্চিত দেখে ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর দক্ষিণ এশিয়া সফরে যান। সেখান থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক যান। ত্রিদিব রায় এরপর আর বাংলাদেশে আসেননি। যুদ্ধে আনুগত্যের কারণে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থানের কারণে পাকিস্তান সরকার তাকে আজীবনের জন্য ফেডারেল মন্ত্রী ঘোষণা করে।

২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদে বাঙালির স্বাধীনতা ইতিহাসের মোটামুটি অন্তরালে থাকা এই ঘৃণিত ব্যাক্তির মৃত্যু হয় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে। মৃত্যুর দশদিন পর ইসলামাবাদে তাকে দাহ করা হয়। তবে বহাল তবিয়তে ত্রিদিব রায়ের ছেলে দেবাশীষ রায় আছেন বাংলাদেশে। চালিয়ে যাচ্ছেন বাবার শিখানো দেশ বিরোধী ঘৃণিত কর্মকান্ড। এখনই সময়- দেশ বিরোধী এই চক্র রুখে দিয়ে উপজাতিদের রক্ষা করার।


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]