উত্তরণ? আমি ইতিবাচক চিন্তার মানুষ।ইতিবাচক ভাবতে চাই।অবশ্যই এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং অবশ্যই সেটা করতে হবে। কেননা বাঙালী মুসলমান (ডান-বাম-নাস্তিক-সেকুলার-ইসলামপন্থি) ও দলিত হিন্দুরা ১৯৪৭ যে কারনে ভারতের সাথে থাকার সুযোগ থাকা স্বত্বেও হাজার মাইল দূরের পাঞ্জাবীদের সাথে নিজেদের ভাগ্য গড়তে চেয়েছিল,সেইসব কারন ভারতে আজও বিদ্যমান।সেসব কারণ যখন তাঁদের সামনে পরিষ্কার হয়ে উঠবে তখন নিজের দেশে ভারতীয় মুসলমান ও দলিতের মত দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে বাঁচতে চাইবেনা।(দেখুনঃ স্বাধীন ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের করুন অবস্থা)। তাঁরা বুঝবে ১০% সংখ্যালঘু যেখানে ২৯% সরকারী চাকুরীতে অবস্থান করে, সেখানে ভারতের সাথে মিশে গিলে সংখ্যাগুরুই চাকুরীর ক্ষেত্রে হয়ে যাবে সংখ্যালঘু।
বাঙালী মুসলমান যেদিন বুঝবে কাশ্মিরের রক্তক্ষরণের অন্যতম প্রধান অপরাধ তাঁরা মুসলমান এবং তাঁরা ব্রাহ্মণ্যবাদের
অধীনতা থেকে মুক্তি চায়।(দেখুনঃ India ‘covering up
abuses’ in Kashmir: report) সেদিন বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই স্বাধীন হবে।এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাচ্ছে বাংলাদেশ।এখন বাংলাদেশের মানুষের সামনে পরিষ্কার কে কি (Who is Who) এবং কাঁর কি ভূমিকা।বাংলাদেশকে তাঁর আত্মার উদ্ধার করতে হবে। সেজন্য সর্বপ্রথম দরকার ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় ভূমিকাকে আমি মিড ওয়াইফ (নার্স )এর সাথে তুলনা করে ব্যাখ্যা করতে চাই। অখণ্ড পাকিস্তানের গর্ভে বাংলাদেশ নামক ভ্রুণটি অনেকদিন থেকেই বেঁড়ে উঠছিল পুর্ব-পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালে এসে প্রসব বেদনা শুরু হয়।এটা হয়ত আরো আগে বা পরে হতে পারত।কিন্তু নিজ দেশের রক্ষক আর্মির আঘাতে প্রসব বেদনায় কাতরানো পুর্ব-পাকিস্তানের সিজার করে বাংলাদেশকে বের করার ক্ষেত্রে নার্সের ভূমিকা পালন করে ভারত।হাসপাতালের মত করে তাঁদের আশ্রয়, সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্ম হয়।বাংলাদেশ সেজন্য নার্সের কাছে কৃতজ্ঞ।সেই কৃতজ্ঞতা সরূপ বাংলাদেশ ভারতকে তাঁর প্রাপ্যের চেয়েও বেশি দিয়েছে।ভারতীয়রা আমাদের অনেক সম্পদ নিয়েছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।গত ৪৫ বছর যাবত নিয়েছে।বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভারতের বাজার।এরচেয়ে আর কি দেয়ার আছে ভারতকে আমাদের? কি দিলে আমাদের মুক্তি মিলবে? মিলবে প্রকৃত স্বাধীনতা?
এখন এই নার্স যদি বাংলাদেশের পিতৃত্ব দাবী করে বসে, আরো বাড়িয়ে বললে হাসপাতাল যদি ৪৫ বছর পরও আমাদেরকে কৃতজ্ঞতার কথা বলে খোটা দিতে চায়, আমাদেরকে দাস বানাতে চায় তখন আর নেয়া যায়না। বাংলাদেশের মানুষ যেকারনে পাকিস্তানকে ত্যাগ করেছে এবং সেটা করতে যেয়ে যে খুন ঝরিয়েছে, সেই একই কারণ যদি আবার সৃষ্টি হয় এবং ভারত যদি পাকিস্তানের স্থানে আবির্ভুত হয় নিপীড়ক শক্তি হিসেবে তাহলে বাঙালী মুসলমান ভারতকে কেন বন্ধু হিসেবে সমীহ করবে?
আরেকটি বিষয় অনেকেই আমরা চিন্তা করিনা, বন্ধুত্ব হয় ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির।রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের এলায়েন্স হয়, বন্ধুত্ব হয়না।রাষ্ট্র একটি এবস্ট্রাক্ট এনটিটি, তাঁর বন্ধু হয়না।আধুনিক জাতি রাষ্ট্র সংজ্ঞাগতভাবেই অন্য রাষ্ট্র থেকে আলাদা। আর সে জন্যই রাজনৈতিক সীমানা, প্রাচীর এবং মানচিত্র। একেই বলে সার্বভৌমত্ব।এক রাষ্ট্রের সাথে আরেক রাষ্ট্রের বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে যোগাযোগ হয়, কূটনীতি চলে কিন্তু বন্ধুত্ব চলেনা।রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ‘বন্ধুত্ব’ পরিভাষাটাই মিসনোমার।
জাতি রাষ্ট্রের সংজ্ঞাই হচ্ছে এমন যে নিজের রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে প্রয়োজনে অস্ত্র চালাতে হয়।শুধু সীমান্তের প্রতিবেশীই নয় অন্য যেকোন রাষ্ট্র আমাদের স্বার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হবে তাঁর বিরুদ্ধেই লড়াই করবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী। ভারত যা প্রতিনিয়ত করছে বাংলাদেশের সাথে সীমান্তে বাংলাদেশীদের খুনের মাধ্যমে। কারণ বাংলাদেশ ভারতের কাছে শত্রু রাষ্ট্র, সেব্যাপারে তাঁদের কোন সন্দেহ নাই,যেটা আমাদের বাংলাদেশীদের
মাঝে আছে।বাংলাদেশের
সরকারী হিসেবে (সংসদে সরাষ্ট্রমন্ত্রীর হিসেব) কেবল গত ১০ বছরেই ৫৯১ জন বাংলাদেশীকে খুন করেছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ ( Dhaka Tribune, BSF kills 591
Bangladeshi citizens in last 10 years, June 07
2016)।যেখানে ভারতীয় কূটনীতি’র মূল সুত্র অনুসারে বাংলাদেশ তাঁর কাছে শত্রু রাষ্ট্র (কৌটল্যের অর্থশাস্ত্র অনুসারে),সেখানে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করে চলেছে ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র? ( পড়ুনঃ ‘বাংলাদেশিদের সঙ্গে শত্রুর মতো আচরণ করছে ভারত’, ডয়সে ভেলে, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৬)
ভারতীয় কূটনীতি’র মূল সুত্র,যাকে মানডালা থিওরিও বলে
এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রজ বুদ্ধিজীবি মরহুম আহমদ ছফা বলে গিয়েছেন;
ছোটদেশকে তার নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনেই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বড়দেশের বিরোধিতা করতে হয়। ঠিক তেমনি একটা স্বনির্ভর বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হলে আমাদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারতের বিরোধিতা করতে হবে। অনেকে ভারত বিরোধিতা মানে হিন্দু বিরোধিতা বুঝে থাকে। কিন্তু আমি কথাটা বলছি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে (আহমদ ছফা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ নির্মাণে অবশ্যই ভারতের বিরোধিতা করতে হবে, মূলধারা বাংলাদেশ, ২৫.০৫.২০১৬)।
দুনিয়ার বহুদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় পাশ্ববর্তী দেশগুলোয়ে আশ্রয় নিয়েছে।এটাই যুদ্ধের সময়ের রীতি।বর্তমানে তুরুস্কেই অবস্থান করছে প্রায় ২৫ লক্ষ সিরিয়ান রিফিউজি,যারা বছরের পর পর সেখানে অবস্থান করছে। বিভিন্ন দেশ সাহায্যের জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে এলায়েন্স করে। আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে মরক্কো এবং মিশরের সহযোগিতা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছিল আমেরিকা।কিন্তু
তাই বলে কি আমেরিকা ফ্রান্সকে বলে আমার পদানত হয়ে থাক বন্ধুত্বস্বরূপ?
একইভাবে ভিয়েতনামের উদাহরণ টানা যেতে পারে, কমিউনিস্ট দেশগুলো এক দিকে আর আমেরিকার নেতৃত্বে এন্টি-কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রগুলো
প্রতিপক্ষ সাইডে অবস্থান নেয় সেখানে। প্রায় ২০ বছর স্থায়ী এই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ লোকের জীবনের বিনিময়ে তাঁরা স্বাধীনতা লাভ করল। যেখানে চীনের ১১০০ এর মত সৈন্য মারা যায়। ভিয়েতনাম ঠিকই আমেরিকা এবং চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।চীন নিশ্চয়ই ভারতের মত ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ সুলভ হেজিমনি কায়েমে ব্যস্ত নেই সেখানে।
মুক্তিযোদ্ধা
কবি মােহাম্মদ রফিক এর মন্তব্যও এখানে বিবেচনাযোগ্য। তিনি বলেন;
“এটা ঠিক যে আমরা ভারতের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছি, রাশিয়ার কাছে সাহায্য নিয়েছি। আর আমেরিকা যখন স্বাধীন হয় তখন তারা কি ফ্রান্সের কাছে সাহায্য নেয় নি? পৃথিবীর প্রত্যেক দেশই তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্যদেশের সাহায্য নেয়। আমরাও নিয়েছি। এটাকে বড় করে দেখার কিচ্ছু নেই। কিন্তু আমাদেরকে স্বাধীন করেছি আমরা। এটা আমাদের আত্মশক্তির জায়গা। এবং এই জায়গাটার কথা ওরা জানে। এবং ওরা জানে, আমরা যদি দাঁড়াই মাথা তুলে, আমরা পৃথিবীটাকে কাঁপিয়ে দিতে পারি।” (সর্বমানুষের মুক্তি
না হলে কাব্যেরও মুক্তি হবে না— মােহাম্মদ রফিক, সাক্ষাতকার, পরস্পর.কম, এপ্রিল ১২, ২০১৬)
অর্থাৎ, ভারতের সাহায্য ছাড়াও পুর্ব-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হতই। অখণ্ড পাকিস্তানের ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই এটি হতে বাধ্য হত।হয়ত আমাদের সময় ৯ মাসের স্থলে ৯ বছর লাগত, হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ত।
শেষ কথা, ভারতের সাথে আমরা কূটনীতি করব, বাণিজ্য করব কোন সন্দেহ নেই।তবে অবশ্যই সেটা স্বাধীনতা, দ্বিপাক্ষিক
স্বার্থ ও সম্মান বজায় রেখে। ভারতের কৃতজ্ঞতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ভারতের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনা।বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের রাজ্যগুলোতে চলা আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকারের যেসকল আন্দোলন চলছে বাংলাদেশ তাঁদেরকে পেট্রোনাইজ করেনা। এই নীতিতে ভারতের সাথে আমাদের সম্মানজনক কূটনীতি চলবে। এভাবেই বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দুনিয়ার বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।এটাই হোক আমাদের আগামীর স্বপ্ন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]