'বাংলাদেশ ত্যাগ করে মুসলিম অত্যাচারের গল্প ফাঁদেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা'-ভারতীয় এক্টিভিস্ট সুক্রিতি রঞ্জন বিশ্বাসের এমন মন্তব্য (১) দেখার পর এবং একই সময়ে রানা দাস গুপ্তের মন্তব্যের (২) পর সংখ্যালঘু হিন্দুদের দেশত্যাগের প্রকৃত কারণ জানার আগ্রহ তৈরি হল। এই বিষয়ে কয়েকটা ধারাবাহিক করার ইচ্ছা আছে। কেননা আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যারা করছে তাঁদের অধিকাংশই পূর্ববঙ্গ থেকে যাওয়া রিফিউজি, পুরো অঞ্চলকে কলুষিত করে ফেলেছে এই লোকগুলো। ভারতীয় গবেষকদের কয়েকটা গবেষণায় উঠে এসেছে কিভাবে 'ভিক্টিমহুড' বয়ান প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। কি ধরণের ঘৃণা তাঁরা ধারণ, লালন ও পালন করে চলেছে আজও সেটা অনলাইনে তাদের লেখালেখি থেকে স্পষ্ট।আমাদের কাছে পাঠানো একজন গবেষকের লেখার সুত্র ধরেই এই লেখাটি পাওয়া। শীগ্রয়ই মূল লেখাটিও প্রকাশিত হবে। এই লেখাটি শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ধাঁচের একটি বই থেকে নেয়া হয়েছে, যিনি ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে শরণার্থীদের পূনর্বাসনে কাজ করেছেন।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই 'উদ্বাস্তু' শিরোনামে বিশাল এক বই লিখে ফেলেছেন। তিনি লিখেন;
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই 'উদ্বাস্তু' শিরোনামে বিশাল এক বই লিখে ফেলেছেন। তিনি লিখেন;
''পুর্ব অঞ্চলে কিন্তু স্বাধীনতার পর, যখন দেশ বিভাগ হয়ে গেল, অবস্থা ভিন্ন রূপ নিল। এখানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধল না। বরং পুর্ব হতে যেখানে দাঙ্গার জের চলছিল তা স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল। কলিকাতার অবস্থা এই প্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে দীর্ঘ এক বৎসরব্যাপী দাঙ্গার ওপর উভয় সম্প্রদায় যবনিকা টেনে দিয়েছিল। তাই একসময়ে মনে হয়েছিল পুর্বাঞ্চলে দেশবিভাগ হওয়া সত্ত্বেও হয়ত শান্তি অক্ষুন্ন থাকবে। অন্তত প্ৰথম দিকে আপাতদৃষ্টিতে শান্তি অক্ষুন্নই ছিল। তাই যদি হয় তবে এত মানুষ পুর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে চলে আসে। কেন? এই প্রশ্ন সেদিন আমার মনে উদয় হয়েছিল। নিজের দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছায় এত কষ্ট বরণ করবার কোন সঙ্গত কারণ আছে কি ? .
আমি গিয়েছিলাম প্রশাসনিক কাজে আলিপুরদুয়ারে। সেটি জেলার পুর্বপ্রাস্তে অবস্থিত। যে ভদ্রলোক সঙ্গে এসেছিলেন তাকে জিজ্ঞাসা না করে পারলাম না- এরা দেশত্যাগ করে এমনভাবে চলে আসছেন কেন তার খবর নিয়েছেন কি ?
তিনি বললেন,- নিয়েছি বৈকি? তবে তার উত্তরটা আমি আর দিই কেন? এঁদের মুখেই শুনুন না। এই বলে নিকটে উপবিষ্ট একটি ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তিনি নিজের যে পরিচয় দিলেন, তা হতে জানা গেল, তিনি ছিলেন বগুড়া জেলার গ্রামাঞ্চলের এক ডাক্তার। বর্ধিষ্ণু পরিবার, প্ৰজাবিলি জমি আর খাস জমি কিছু ছিল। সব ছেড়ে দিয়ে সম্প্রতি চলে এসেছেন।
আমার সঙ্গী তাকে উদ্দেশ করে বললেন,-দেখুন, এই ভদ্রলোক জানতে চান, দেশে তো কোন গোলমাল নেই, তবু কেন আপনারা দেশ ছেড়ে চলে এলেন?... তিনি যে কাহিনী বললেন তা সংক্ষেপে এই দাঁড়ায়। বাড়ীতে মোটা চালের অভাব না হলেও এরা সরু চাল বাজার হতে বরাবর কিনে খেতেন। এই সূত্রেই স্বাধীনতার পরের একদিনের তিক্ত ঘটনার কথা বললেন।
সেদিন পুরাতন পরিচিত মুদির দোকানে গিয়ে এক বস্তা চাল কিনলেন। পাওনা মিটিয়ে দিয়ে উঠতে যাবেন, এমন সময় প্রতিবেশী কালু মিঞা এসে হাজির। তিনি একজন স্থানীয় মোক্তার। তিনিও মুন্দির দোকানে এসেছেন সরু চালের খোজে। দুৰ্ভাগ্যক্ৰমে দোকানে তখন এক বস্তা মাত্ৰ মিহি চাল ছিল এবং তা ইতিমধ্যেই বিলি হয়ে গেছে। তিনি নাকি তখন তাই শুনে মুদিকে বললেনঃ --তাই নাকি ? তাহলে ওই বস্তাটাই আমাকে দাও।
ভদ্রলোক তখন প্ৰতিবাদ করে বললেন, তিনি যে ও বস্তাটা আগেই কিনে ফেলেছেন, এমন কি দামও মিটিয়ে দিয়েছেন, কাজেই সেটা কি করে হয় ? কিন্তু তাতে কোন ফল হল না। হুঙ্কার দিয়ে কালু মিঞা নাকি বললেনঃ আলবৎ হয়। একি হিন্দুস্থান পেয়েছ? বলে জোর করেই বস্তাটা কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন।
এই কাহিনী বলতে বলতে, মনে হল, ভদ্রলোকের উত্তেজনা যেন আরও বেড়ে চলেছে। তার মনের দুঃখের আবেগে তিনি আরও কিছু কথা বলে চললেন যা আমাদের বর্তমান আলোচনায় খুব প্রাসঙ্গিক হবে, তাই যতদূর স্মরণ হয় তাঁর নিজের মুখেই সেটা বলতে চেষ্টা করব। তিনি বলতে শুরু করলেনঃ --এমনকি আর করেছে বলুন, মারধোর তো করে নি। তবে কি জানেন, আমার চামড়া একটু পাতলা তাই সেদিন মনে ভারি আঘাত লেগেছিল। তবু দেশের ভিটেমাটি ত্যাগ করতে মায়া হল। তাই তখনও রয়ে গেলাম! ভদ্রলোক থামলেন না, আরও বলে চললেনঃ --কিছুদিন পরে এক সন্ধ্যাবেল বাড়ীর বার হতে জোর গলায় ডাক শুনলাম। --কর্তা, বাড়ী আছ। হে ?
ভাবলাম কে বুঝি চেনাজানা মাতব্বর মুসলমান প্রতিবেশী এসেছে। বাইরে গিয়ে দেখি, আমারই বহু কালের এক পুরাতন প্ৰজা এসে হাজির। এক গাল হেসে বললঃ --কর্তা, ইংরেজ চলে গেছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমাদের পাকিস্তান হয়েছে। তাই দোস্তানি করতে এলাম।
তার এই উঁচু সুরে কথা আর গায়ে-পড়া ভাব দেখে আমার মনে মনে বেশ রাগ হল। আগে দেখা হলে এরাই দশ হাত দূর থেকে "অন্তত দশবার সেলাম ঠুকত। কিন্তু এখন যে পাকিস্তান। কাজেই মুখে খুশির ভান করে বললাম, -তা বেশ।
সে তখন বলল,-তা বাইরে দাঁড়িয়ে কেন কর্তা, ভিতরে চল। এই বলে বাড়ীখানা যেন তারই সম্পত্তি এমন ভাব দেখিয়ে একরকম আমাকে টেনে নিয়ে ভিতরে চলল। বৈঠকখানায় নয়, একেবারে অন্দরে শোবার ঘরে। দিব্যি আরাম করে বিছানায় বসে আমাকে একরকম জোর করে পাশে বসিয়ে বললঃ -কর্তা, এখন পাকিস্তান হয়ে গেছে। মনে রেখ, আমরা আর ছোট নই। ভুলে যেও না, এখন থেকে সমানে সমানে আমাদের সঙ্গে মিতালি করতে হবে। কাহিনী বলা এখানে শেষ হয়ে গেল। এর পর ভদ্রলোক একটু থেমে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে, আমাদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেনঃ --কি মশাই, এর পরেও কি পাকিস্তানে থাকতে বলেন?'' (৩)
নোটঃ
(১) বাংলাদেশ ত্যাগ করে মুসলিম অত্যাচারের গল্প ফাঁদেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা-ভারতীয় এক্টিভিস্ট সুক্রিতি রঞ্জন বিশ্বাস
(২) রানা দাস গুপ্তের দাবী 'বাংলাদেশে হিন্দুরা জাতিগত নির্মুল' এর শিকার!
(৩) শ্রী হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, উদ্ধাস্তু, সাহিত্য সংসদ, ১৯৬০, পৃ. ১১-১৫
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]