রবিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৭

বাংলা, বঙ্গ, বঙ্গালা থেকে বাংলাদেশ। পর্ব : ২

বঙ্গ : ঋগবেদে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ নাই। “ঐতরেয় আরণ্যক” গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ পাওয়া যায় যেখানে ‘বঙ্গ’ এবং ‘মাগধ’-এর কথা বলা হইয়াছে বলিয়া কোন কোন পণ্ডিত মনে করেন। কিন্তু “ঐতরেয় আরণ্যক”-এর ভিত্তিতে ‘বঙ্গ’-এর প্রাচীনতা নির্ণয় করা সন্দেহাতীত নয়, কারণ ভাষ্যকারেরা এই বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছিতে পারেন নাই। ৮ “বোধায়ন ধৰ্মসূত্রে” ‘বঙ্গ’-এর স্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। এই সূত্রে তৎকালীন ভূখণ্ড বা জনপদগুলিকে আর্যদের পবিত্রতার আলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়-সর্ব নিকৃষ্ট অংশে ‘বঙ্গ’ এবং ‘কলিঙ্গ’সহ কয়েকটি ভূখন্ডের নাম করা হইয়াছে। এই নিকৃষ্ট এলাকায় অস্থায়ীভাবে বাস করিলেও প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইত।৯ পুরাণে পূৰ্বাঞ্চলীয় দেশসমূহের তালিকায় ‘অঙ্গ’, ‘বিদেহ’, ‘পুণ্ড্র’ ইত্যাদির সঙ্গে ‘বঙ্গ’ যোগ করা হইয়াছে। ১০ রামায়ণে অযোধ্যার সঙ্গে মিত্ৰতা স্থাপনকারী দেশের তালিকায় ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ আছে; ইহাতে বুঝা যায়, ‘বঙ্গ’রা তখন আর অস্পৃশ্য বা বর্বর নয়।১১ মহাভারতেও ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ আছে। ভীমের দিগ্বিজয় অংশে বলা হইয়াছে যে ভীম পুণ্ড্র এবং কুশী নদীর তীরের রাজাকে পরাজিত করিয়া ‘বঙ্গ’-এর রাজাকে আক্রমণ করেন ; এর পরে ভীম তাম্রলিপ্তির রাজাকে পরাস্ত করিয়া কর্বট ও সুহ্ম এবং অন্য ম্লেচ্ছদের পরাজিত করেন। এই অঞ্চলসমূহ জয় করিয়া ভীম লোহিত্য (ব্ৰহ্মপুত্র)-এর দিকে যাত্রা করেন। সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারী ম্লেচ্ছদের নিকট হইতে তিনি কর আদায় করেন।১২ প্রফেসর আবদুল করিম

উপরোক্ত সূত্রগুলিতে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ পাওয়া গেলেও, ইহার ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা করা যায় না। মহাভারতে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বা ভূভাগের নাম দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু এই বর্ণনায় contiguity বা ভৌগোলিক সান্নিধ্য রক্ষার প্রতি নজর দেওয়া হয় নাই। তবে ইহা বুঝা যায় যে ‘বঙ্গ’ একটি পূর্বাঞ্চলীয় দেশ বা জনপদ এবং ইহার অবস্থিতি ছিল ‘অঙ্গ’, ‘সুহ্ম’, ‘তাম্রলিপ্ত’, ‘মুদগরক”, ‘মগধ’ এবং পুণ্ড্র’-এর কাছাকাছি। মহাভারতে ভীমের দিগ্বিজয়ের সীমা দেওয়া হইয়াছে ‘লোতিহ্য’ বা ব্ৰহ্মপুত্র। সুতরাং ধরিয়া নেওয়া যায় যে এই জনপদগুলি ব্ৰহ্মপুত্র নদের পশ্চিমেই অবস্থিত ছিল।
কালিদাসের রঘুবংশে রঘুর দিগ্বিজয়ের কথা বলা হইয়াছে। রঘু ‘সুহ্ম’দের পরাস্ত করিয়া ‘বঙ্গ’দের পরাস্ত করেন এবং বলা হইয়াছে যে রঘু ‘গঙ্গা স্রোত হন্তরেষু’ অঞ্চলে বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেন। এখানে ‘বঙ্গ’দের ‘নৌ-সাধনোদ্যত’ রূপে অভিহিত করা হইয়াছে।১৩ ইহার পরবর্তী শ্লোকে কালিদাস রঘু কর্তৃক ‘কাপিশা’ নদী অতিক্রম করিয়া কলিঙ্গ দেশে যাত্রার কথা বলিয়াছে। ‘গঙ্গা স্রোত হন্তরেষু’-এর ব্যাখ্যা নিয়া মতভেদ থাকিলেও আধুনিক কালে সকলে স্বীকার করেন যে ইহার অর্থ গঙ্গা স্রোত-অন্তর্বর্তী ভূ-ভাগ।

গঙ্গার দুই প্রধান স্রোত-ভাগীরথী ও পদ্মা। টলেমী গঙ্গার পাঁচটি শাখার উল্লেখ করেন- সর্ব-পশ্চিম শাখা কামবাইসন এবং সর্ব-পূর্ব শাখা এন্টিবোল। হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী কালিদাসের পরবর্তী শ্লোকের দ্বারা বিভ্রান্ত হইয়া বলেন, “Kalidas, the traditional contemporary of Dinnaga (fifth century A.D.) places the Vangas amidst the streams of the Ganges (Gangasorta’ntara). The western boundary of this country possibly at times extended beyond the Hooghly to the river Kapisa or Kasai in the Midnapore district.”১৪

ডি.সি. সরকার রায়চৌধুরীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন এই শর্তে যে যদি কাপিশা নদী টলেমীর কামবাইসনের সঙ্গে এক ও অভিন্ন হয়, যাহা রায়চৌধুরী মনে করেন।১৫ কিন্তু কাপিশা টলেমীর কামবাইসনের সঙ্গে অভিন্ন ইহতে পারে না। এন. কে. ভট্টশালী প্রমাণ করেন যে, টলেমীর কামবাইসন গঙ্গার ভাগীরথী শাখার সঙ্গে অভিন্ন, কারণ প্রথমত ভাগীরথী শাখাই গঙ্গার প্রধান এবং সর্ব-পশ্চিম শাখা, এবং দ্বিতীয়ত কাপিশা নদী গঙ্গার শাখাই নয়, গঙ্গার সঙ্গে কপিশার কোন সম্পর্ক নাই।১৬

তাই আধুনিক পণ্ডিতেরা রায়চৌধুরীর বক্তব্য গ্ৰহণ করেন না। ডঃ আবদুল মোমিন চৌধুরী বলেন, “এখন যুক্তি প্রদর্শন করে প্রমাণ করা হয়েছে যে মূলত রঘুবংশের শ্লোকসমূহের ব্যাখ্যা এইভাবে করা সম্ভব যে ভাগীরথী থেকে কশাই নদী পর্যন্ত এলাকা সুহ্মের অন্তর্গত ছিল এবং কালিদাসের বিবরণে রঘু কর্তৃক প্রথমে ‘সুহ্ম’ জয়, ‘সুহ্ম’ থেকে বঙ্গ জয় এবং পরে সুহ্ম থেকেই কাপিশা অতিক্রম করে কলিঙ্গের দিকে গমনের কথা আছে।১৭


যাহা হউক, রঘুবংশের এই বিবরণের আলোকে বলা যায় যে গঙ্গার দুই স্রোতের মধ্যবর্তী ভূভাগই বঙ্গ, এই দুই স্রোত ভাগীরথী এবং পদ্মা হইতে পারে, আবার টলেমী বর্ণিত পাঁচটি স্রোতের যে-কোন দুইটিও হইতে পারে ; যেইভাবেই বিচার করা হউক না কেন, এই সূত্রে ‘বঙ্গ’ দ্বারা ভাগীরথীর পূর্ব অঞ্চল নির্দেশ করে।

মুসলমান আমলে ‘বঙ্গ’-এর পরিচয় আরও স্পষ্ট হইয়া উঠে। প্রথম মুসলমান ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ কয়েক স্থানে ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ করেন, যেমনঃ

(ক) মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর বিহার বিজয়ের পরবর্তী ঘটনাবলী বর্ণনা করিয়া মিনহাজ বলেন, “বিধর্মীদের হৃদয়ে লাখনৌতি এবং বিহার রাজ্যে এবং বঙ্গ ও কামরূদ রাজ্যে তিনি পূর্ণ আতঙ্কের ভাব সৃষ্টি করেন।১৮

(খ) বখতিয়ার খলজী কর্তৃক নদীয়া আক্রমণের অব্যবহিত পূর্বের ঘটনা বর্ণনা করিয়া মিনহাজ বলেন যে, “তুর্কী আক্রমণের আশঙ্কায় লক্ষ্মণ সেনের দরবারের অধিকাংশ ব্ৰাহ্মণ এবং সাহাগণ (বাণিক সম্প্রদায়) সকোনাত রাজ্য, বঙ্গ ও কামরূদ রাজ্যে গমন করলেন। রাজ্য পরিত্যাগ করে যাওয়া রায় লখমনিয়ার নিকট সঙ্গত মনে হল না।”১৯

(গ) লক্ষ্মণ সেনের পরাজয় এবং পলায়নের কথা বলিয়া মিনহাজ বলেন, “রায় লখমনিয়া সকোনাত ও বঙ্গ রাজ্যের দিকে পৌঁছে গেলেন… তাঁর বংশধরগণ এ সময় পর্যন্ত বঙ্গ রাজ্যে রাজত্ব করছেন।”২০

(ঘ) সুলতান গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ খলজীর (১২১২-১২২৭ খ্ৰীঃ) রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে মিনহাজ বলেন, “লাখনৌতি রাজ্যের পার্শ্ববর্তী সমুদয় অঞ্চল, যথা জাজনগর, বঙ্গ রাজ্য, কামরূদ ও তিরহুত ও রাজ্যসমূহ তাঁকে কর প্রেরণ করত।”২১

(ঙ) দিল্লীর সুলতান ইলতুতমিশের ছেলে যুবরাজ নাসির-উদ-দীন মাহমুদ কর্তৃক লখনৌতি আক্রমণের বিষয় উল্লেখ করিয়া মিনহাজ বলেন, “এই বৎসর গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ হুসায়েন খলজী সসৈন্যে লখনৌতি থেকে বঙ্গ ও কামরূদ অভিযানে গিয়েছিলেন এবং লখনৌতি নগর অরক্ষিত অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন।”২২

(চ) লখনৌতিস্থ দিল্লীর গভর্নর মালিক সাইফ-উদ-দীন আইবক য়ুগণ-তৎ সম্পর্কে মিনহাজ বলেন, “তিনি ঐ রাজ্যে অসীম বীরত্বের পরিচয় প্রদান করেন এবং ‘বঙ্গ’ থেকে অনেক হস্তী অধিকার করে মহান সুলতানের খেদমতে প্রেরণ করেন।”২৩

(ছ) তাজ-উদ-দীন আরসলান খান কর্তৃক লখনৌতি অধিকারের বর্ণনা দিয়া মিনহাজ বলেন, “(সে সময়ে) লাখনৌতির শাসনকর্তা (বলবন-ই-ইউজবকী) বঙ্গ রাজ্যে (অভিযানে) গিয়েছিলেন এবং লাখনৌতি নগর অরক্ষিত ছিল।”২৪

উপরোক্ত সূত্রগুলিতে মিনহাজ ‘বঙ্গ’কে ‘বিলাদ’, ‘মমালিক’ এবং ‘বেলায়েৎ’ রূপে উল্লেখ করেন, যাহার অর্থ করা হইয়াছে রাজ্য, অর্থাৎ বঙ্গ রাজ্য। প্রকৃতপক্ষে শব্দগুলি সমার্থক২৫ এবং মিনহাজও সেই কারণে ‘বঙ্গ’-এর সঙ্গে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ‘বিলাদ’, কিন্তু কোন কোন স্থানে ‘মমালিক’ এবং ‘বেলায়েৎ’ শব্দ যোগ করেছেন। তাহাছাড়া ‘বঙ্গ’ রাজ্য উল্লেখ করার সময় প্রায় ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ‘সকোনত’ বা ‘কামরূদ’-এর নামও উল্লেখ করা হইয়াছে। কামরূদ কামরূপের সঙ্গে অভিন্ন এবং সকোনতকে সমতট-এর সঙ্গে অভিন্ন মনে করা হয়।২৬

সুতরাং ‘বঙ্গ’ কোন ক্ষুদ্র এলাকা ছিল না, বরং সমতট এবং কামরূপের মতো একটি রাজ্য ছিল। আরও বুঝা যায় যে সমতট এবং কামরূপ-এর নিকটেই ‘বঙ্গ’ রাজ্য অবস্থিত ছিল।

মিনহাজ তাঁহার সমকালীন পূর্ব ভারতের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করেন। প্রাচীন কালে যাহারা ‘বঙ্গ’-এর উল্লেখ করেছেন, তাঁহাদের ‘বঙ্গ’ বা পূর্ব ভারতের সঙ্গে সম্যক পরিচয় ছিল না, কিন্তু মিনহাজ নিজে লখনৌতি রাজ্যে আসেন এবং দুই বৎসরকাল বাস করেন। তৎকালীন লখনৌতির শাসনকর্তার অতিথি ছিলেন তিনি; শাসকবর্গ এবং শাসনযন্ত্রের সঙ্গে তাঁহার পরিচয় ছিল; লখনৌতির মুসলমান রাজ্যের পক্ষ হইয়া তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করেন এবং এক সময় লখনৌতির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শাসকের বিরোধের (ইজ্জ-উদ-দীন তুঘরল তুঘান খান এবং তমর খান কিরান) মধ্যস্থতা করেন। তাহাছাড়া মিনহাজ তাঁহার লখনৌতি আসার পূর্বেকার মুসলিম শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে মুতামদ-উদ-দৌলা নামক বখতিয়ার খলজীর একজন সহকর্মীর নিকট হইতে তথ্য সংগ্রহ করেন। ঐতিহাসিক তথ্য জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভৌগোলিক তথ্যও সংগ্রহ করেন। সুতরাং সমসাময়িক ভৌগোলিক স্থানাদির অবস্থান নির্ণয়ে তাঁহার ভুল হওয়ার কথা নয় ; অন্ততপক্ষে ‘বঙ্গ’-এর অবস্থান নির্ণয়ে মিনহাজের ভুল ধরা পড়ে নাই।

উপরোক্ত (ক) সংখ্যক সূত্রে দেখা যায় যে মিনহাজ লখনৌতি ও বিহারকে একসঙ্গে প্রথমে এবং বঙ্গ ও কামরূপকে একসঙ্গে পরে উল্লেখ করেন। ইহাতে বুঝা যায় যে বিহার ও লখনৌতির অবস্থান কাছাকাছি এবং বঙ্গ ও কামরূপের অবস্থানও কাছাকাছি ছিল। আরও বুঝা যায় যে বঙ্গ ও কামরূপ লখনৌতির পূর্বদিকে অবস্থিত ছিল। লখনৌতি রাজ্যের অবস্থান নির্দেশ করিয়া মিনহাজ, বলেন, “গঙ্গা (নদীর) দুই পার্শ্বে অবস্থিত লখনৌতি রাজ্য দুই অংশে বিভক্ত। পশ্চিমাঞ্চলকে ‘রাল’ (রাঢ়) বলা হয়ে থাকে এবং সেদিকেই ‘লখনৌর’ নগর অবস্থিত। পূর্বাঞ্চলকে ‘বরিন্দ’ (বরেন্দ্র) বলা হয়ে থাকে এবং দেওকোট (দেবকোট) নগর সেদিকে অবস্থিত।”২৭

লখনৌতি নাম সেন আমলের লক্ষ্মণাবতীর ফার্সী বা মুসলমানী রূপ। মিনহাজ বলেন যে নদীয়া জয় করার পরে বখতিয়ার খলজী এই “নগর ধ্বংস করেন এবং লখনৌতি নামক স্থানে রাজধানী স্থাপন করেন।”২৮ ঐ সময় হইতে ‘বাংলা’য় প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজ্য লখনৌতি রাজ্য নামে পরিচিত হয় এবং এই নাম প্রায় দেড়শত বৎসর চলে।২৯

মিনহাজের বক্তব্য অতি পরিষ্কার, তিনি বলেন যে লখনৌতি রাজ্য গঙ্গা নদী দ্বারা দুইভাগে বিভক্ত ছিল, পশ্চিম অংশ রাঢ় নামে এবং পূর্ব অংশ বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল। আরও ব্যাখ্যা করিয়া তিনি বলেন যে যেই অংশে লখনৌর অবস্থিত সেই অংশের নাম রাঢ়৩০ এবং যেই অংশে দেওকোট (দেবকোট) অবস্থিত, সেই অংশের নাম বরেন্দ্র। লখনৌর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জিলার নগৌর এবং দেওকোট দিনাজপুর জিলায় অবস্থিত। সুতরাং রাঢ় এবং বরেন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে মিনহাজের মনে কোন দ্বিধা ছিল না এবং এই দুইটি অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থিতি সঠিকভাবেই দেওয়া হইয়াছে।

মিনহাজের বিবরণের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর সঠিক ভৌগোলিক অবস্থিতি নির্ণয় করা সহজ হয়। উপরোক্ত ‘গ’ সংখ্যক সূত্র এই বিষয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই সূত্রে বলা হইয়াছে যে, “রায় লখমনিয়া সকোনাত ও বঙ্গ রাজ্যের দিকে পৌঁছে গেলেন…তাঁর বংশধরগণ এ সময় পর্যন্ত বঙ্গ রাজ্যে রাজত্ব করছেন।”৩১ এই বিষয়ে কোন দ্বিমত নাই যে লক্ষ্মণ সেন নদীয়া হইতে পলায়ন করিয়া বিক্রমপুরে যান এবং সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁহার দুই ছেলে কেশব সেন এবং বিশ্বরূপ সেন অন্ততপক্ষে ১২২৩ খ্ৰীষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। কিন্তু এই সময় রাজধানী বিক্রমপুরে ছিল কিনা সন্দেহ। বিজয় সেন এবং বল্লাল সেনের দুইটি তাম্রশাসন এবং লক্ষ্মণ সেনের প্রথম পাঁচটি তাম্রশাসন বিক্রমপুর হইতে জারী করা হয়, কিন্তু লক্ষ্মণ সেনের শেষ দুইটি অর্থাৎ মাধাইনগর ও ভাওয়াল তাম্রশাসন বিক্রমপুর হইতে জারি হয় নাই, বরং ধার্যগ্রাম হইতে জারি হয়; লক্ষ্মণ সেনের উত্তরাধিকারীদের তাম্রশাসন ফলগুগ্ৰাম থেকে জারি করা হয়।৩২ ধাৰ্যগ্রাম ও ফলগুগ্রাম-এর অবস্থিতি নির্ণয় সহজ নয়; তবে এন. কে. ভট্টশালী ধাৰ্যগ্রামকে লক্ষা নদীর তীরে ভাওয়াল পরগনায় বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।৩৩

এই সময় কি বিক্রমপুর হইতে রাজধানী স্থানান্তরিত হয়, বা বিক্রমপুরে রাজধানী থাকিলেও ধাৰ্যগ্রাম ও ফলগুগ্রামে অস্থায়ীভাবে রাজশিবির স্থাপিত হয়, তাহা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। বিশ্বরূপ সেন এবং কেশব সেনের তাম্রলিপিতে বিক্রমপুর-ভাগ’কে ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে, বিশ্বরূপ সেনের সাহিত্য-পরিষৎ লিপিতে ‘বঙ্গ’-এর ‘নাব্য-ভাগ’-এর কথা বলা হইয়াছে। ‘বিক্রমপুর-ভাগ’কে মুন্সীগঞ্জ ও মাদারীপুর এবং ‘নাব্য-ভাগ’কে ফরিদপুর এবং বাকেরগঞ্জের সঙ্গে চিহ্নিত করা হয়।৩৪ ফলে আধুনিক পন্ডিতেরা মত প্ৰকাশ করেন যে ঢাকা-ফরিদপুর-বাকেরগঞ্জ এলাকা ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষদিকে উপকূলবর্তী সুন্দরবন এলাকায় ডুম্মনপাল একজন বৌদ্ধ নরপতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। ১১৯৬ খ্ৰীষ্টাব্দে তিনি খাড়ি অঞ্চলে মহারাজাধিরাজ উপাধি নিয়া তাম্রশাসন জারি করেন।৩৫ ডুম্মনপালের এই রাজ্য চব্বিশ পরগণা, খুলনা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়া গঠিত ছিল বলিয়া মনে হয়।৩৬ রণবঙ্কমল্ল হারিকেল দেবের ১২২০ খ্ৰীষ্টাব্দের ময়নামতি তাম্রশাসনে দেখা যায় যে অন্তত ১২০৪ খ্ৰীষ্টাব্দ থেকে মেঘনা নদীর পূর্বদিকে কুমিল্লা অঞ্চলে একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দামোদর দেবের চট্টগ্রাম তাম্রলিপি এবং অন্যান্য তাম্রলিপিতে দেখা যায় যে ১২৩০ খ্ৰীষ্টাব্দের পর হইতে বেশ কিছুদিন যাবত দেব বংশের স্বাধীন রাজ্য মেঘনা-পূর্ববর্তী অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অঞ্চল প্রাচীন কাল হইতে সমতট নামে পরিচিত ছিল।৩৭

‘শক্তি সঙ্গমতন্ত্রে’র “ষটপঞ্চাশদ্দেশ’ বিভাগে ‘রত্নারকম’ বা সাগর হইতে ব্ৰহ্মপুত্র পর্যন্ত ভূভাগকে ‘বঙ্গ’ রূপে বর্ণনা করা হইয়াছে।৩৮এই বই সপ্তদশ শতকে লিখিত। এখানে ‘রত্নাকরম’ বা সাগর বলিতে বঙ্গোপসাগর বুঝায়, সুতরাং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর হইতে উত্তরে ব্ৰহ্মপুত্র পর্যন্ত ‘বঙ্গ’-এর সীমা।

উপরোক্ত সূত্রসমূহের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর পরিচিতি নিয়ে কোন দ্বিধা থাকার কথা নয়। কালিদাসের রঘুবংশে গঙ্গার স্রোতের মধ্যবর্তী স্থান ‘বঙ্গ’; অতএব গঙ্গার পশ্চিম স্রোত ভাগীরথী এবং পূর্ব স্রোত পদ্মার মধ্যবর্তী ভূ-ভাগ ‘বঙ্গ’। মিনহাজ-ই-সিরাজের সাক্ষ্যে মনে হয় রাঢ় এবং বরেন্দ্রর পূর্বেই ‘বঙ্গ’ এবং সেন রাজাদের তামলিপিতে দেখা যায় ঢাকা ফরিদপুর-বাকেরগঞ্জ এলাকা ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। শক্তি সঙ্গমতন্ত্রের আলোকে ‘বঙ্গ’-এর দক্ষিণ সীমা বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর সীমা ব্ৰহ্মপুত্র। ব্ৰহ্মপুত্র এবং আরও দক্ষিণে মেঘনা ‘বঙ্গ’-এর পূর্ব সীমাও ছিল, কারণ উপরে উল্লিখিত সূত্রগুলিতে মেঘনার পূর্ববর্তী ভূভাগ ‘বঙ্গ’-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। উত্তর দিকে ‘বঙ্গ’-এর পশ্চিম-সীমা এবং বরেন্দ্রের পূর্বসীমা এক ও অভিন্ন ছিল। এই প্রেক্ষিতে করতোয়া নদী ‘বঙ্গ’-এর উত্তর দিকের পশ্চিম সীমানা। ‘বঙ্গ’-এর এই সীমারেখার মধ্যস্থ ভূভাগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর অধীনস্থ হয়, তাতে রাজনৈতিকভাবে বঙ্গ খণ্ডিত হইয়াছে, ভৌগোলিকভাবে নহে।।৩৯

সুতরাং পশ্চিমে ভাগীরথী ও করতোয়া নদী, পূর্বে ব্ৰহ্মপুত্র ও মেঘনা, উত্তরে ব্ৰহ্মপুত্র এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, এই বিত্তীর্ণ ভূখণ্ড নিয়া প্রাচীন ‘বঙ্গ’ রাজ্য।

তথ্য নির্দেশঃ
৮. ড. এইচ. সি. রায় চৌধুরী বলেন “Some writers have traced the name of the Vangas, another early Bengal tribe, to the Aitareya Aranyaka. In the text occur the words ‘vayamsi vangavagadhas-cerapadha’. The expression vangavagadah has been emended to Vanga-Magadha, that is the people of Vanga and Magadha. The Aranyaka refers to them as folks who were guilty of transgression. Commentators, ancient and modern, differ as to the real meaning of the words used in the text. The possibility that the expressions in the Aranyaka signify old ethnic names is not excluded. But it is extremely hazardous to build any theory about the antiquity of the Vangas on such fragile foundations.” (History of Bengal, Vol. 1 ed. R. C. Majumdar, Dhaka, 1943, HBI রূপে উল্লেখিত, পৃ. ৭-৮)।

৯. HBI পৃ.৮ ।

১০. D. C. Sircar : Studies in the Geography of Ancient and Medieval India, Delhi, 2nd edition, 1971,(পরে Studies রূপে উল্লেখিত),পৃ. ৩৬-৩৮)।

১১. HBI পৃ.৮ ।

১২. ঐ পৃ.৮-৯ ।

১৩. Studies, পৃ.১৩২ টীকা ৭।

১৪. HBI, পৃ.১৫

১৫. Studies, পৃ.২১৭-১৮

১৬. Science and Culture, Vol. VII,পৃ. ২৩৩-৩৯।

১৭. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ. ২০ ৷

১৮. মিনহাজ-ই-সিরাজঃ তবাকাত-ই-নাসিরী, আ. ক. ম. যাকারিয়া কর্তৃক অনূদিত, ঢাকা, ১৯৮৩ (পরে মিনহাজ রূপে উল্লেখিত), পৃ. ২১।

১৯. ঐ, পৃ. ২৬।

২০. ঐ, পৃ. ২৮।

২১. ঐ, পৃ. ৬০-৬১।

২২. ঐ, পৃ. ৬৪।

২৩. ঐ, পৃ. ১৩৮।

২৪. ঐ, পৃ. ১৩৭।

২৫. Steingass-এর Persian-English Dictionary-তে শব্দগুলির অর্থ নিম্নরূপঃ

বিলাদ-pl. of balad-cities, Countries, regions, habitations, territories, an inhabited country.

মমালিক-pl. of mamlakat-kingdoms, provinces, states, regions, possessions, crownland.

বিলায়েৎ- An inhabited country, dominion, district.

২৬. আধুনিক পণ্ডিতেরা সকনতকে সমতটের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন, যেমন দেখুন মিনহাজ, পৃ. ২৬ টীকা ২। কিন্তু ডঃ কানুনগো বলেন, “The region to which Rai Lakhmaniya fled from Nadia is named in the T.N. as Bangwa s-k-n-at. Bang means East Bengal and the second place-name is a copyist’s error for Sil-hat i.e. Sylhet.” (History of Bengal, Vol. II, J. N. Sarkar, Dhaka, 1948), পৃ. ৮

২৭. মিনহাজ, পৃ. ২৯

২৮. ঐ, পৃ. ২৯।

২৯. সেন রাজাদের মধ্যে লক্ষ্মণ সেন গৌড়েশ্বর উপাধি গ্ৰহণ করেন। পরবর্তী সেন রাজাদের তাম্রলিপিতে বিজয় সেন এবং বল্লাল সেনকেও গৌড়েশ্বর উপাধি দেওয়া হইলেও তাঁহারা নিজেরা এই উপাধি নেন নাই। লক্ষ্মণ সেন কর্তৃক গৌড় অধিকৃত হওয়ার পরে তাঁহার নামানুসারে গৌড়ের নাম লক্ষ্মণাবতী হয় এবং এই লক্ষ্মণাবতীই ফার্সী ইতিহাসে লখনৌতি রূপ লাভ করে। তুলনীয় মিনহাজ, পৃ. ২৯, টীকা ৩।

৩০. অবশ্য সম্পূর্ণ রাঢ় মুসলমানদের অধিকারে ছিল মনে করা ভুল হইবে। বখতিয়ার খলজীর লখনৌতি রাজ্য মোটামুটিভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল; বখতিয়ার খলজী রাঢ় অঞ্চলে তাঁহার অধিকার সুদৃঢ় করার চেষ্টা করেন এবং মুহাম্মদ শীরান খলজীকে ঐ পদে নিযুক্ত করেন। গিয়াস-উদ-দীন ইওয়াজ খলজীর সময়ে রাঢ়ের অধিকাংশ এলাকা মুসলমানদের অধিকারে আসে। মিনহাজ যখন লখনৌতি আসিয়া ছিলেন (৬৪০-৬৪২ হিজরী/১২৪২-১২৪৪ খ্ৰীঃ), তখন রাঢ়ের দক্ষিণ সীমানায় উড়িষ্যার গঙ্গা বংশীয় রাজাদের সঙ্গে মুসলমানদের যুদ্ধ চলিতেছিল, তবে ঐ সময় রাঢ়ের অধিকাংশ এলাকা দখলে আসে।

৩১. মিনহাজ, পৃ. ২৮।

৩২. HBI, পৃ.২৫১

৩৩. Jouurnal of the Asiatic Society of Bengal, Calcutta, 1942, Vol. IV, No. 1,পৃ.২০ ।

৩৪. Studies, পৃ. ৯০, ১৩৩

৩৫. A. M. Chowdhury: Dynastic History of bengal, Dhaka, পৃ. ২৪৭।

৩৬. মিনহাজ, পৃ. ২৮, টীকা ৪।

৩৭. A. M. Chowdhury : Op. cit. পৃ.২৪৭-৪৮

৩৮. Studies, পৃ. ৯০।

৩৯.যাকারিয়া সাহেব বলেন, “করতোয়া ও ভাগীরথী নদীর পূর্বতীরবর্তী ভূবাগ, অর্থাৎ বর্তমান ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, অবিভক্ত নদীয়া জিলাসমূহ, টাঙ্গাইল সহ ময়মনসিংহ জিলার দক্ষিণাংশ, কুমিল্লা জিলার কিয়দংশ, পাবনা ও বগুড়া জিলার সামান্য অংশ নিয়ে খুব সম্ভব তাদনীন্তন বঙ্গা রাজ সীমাবদ্ধ ছিল।” (মিনহাজ, পৃ. ৬০-৬১, টীকা) ডঃ আবদুল মোমিন চৌধুরী বলেন, “ব্রহ্মপুত্র নদীর যে প্রবাহ ময়মনসিংহের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতো, সম্ভবতঃ এই প্রবাহ বঙ্গের উত্তর ও পূর্বসীমা নির্ধারণ করতো বলে বলা যায়। এই সূত্রে বঙ্গের সীমা দক্ষিণে সুন্দর বনাঞ্চলের পূর্বপ্রান্ত থেকে উত্তরে ময়মনসিংহ জেলার ব্ৰহ্মপুত্র প্রবাহ পর্যন্ত নির্ধারণ করা সম্ভখুব সম্ভবতঃ ব্ৰহ্মপুত্র বঙ্গের পূর্ব সীমাও নির্ধারণ করে এবং ব্ৰহ্মপুত্রের পূর্বে অবস্থিত ভূভাগ (মেঘনা অববাহিকা) বঙ্গের বাইরে ছিল বলেই মনে হয়।” (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৭, পৃ.২০)।ডি. সি. সরকার বলেন, “The country of Vanga is described as extending from sea as far as the Brahmaputra. The sea is no doubt the Bay of Bengal in the south, and the Brahmaputra, the northern boundary, seems to indicate that portion of the river which bifurcates from the Jamuna. Vanga therefore included the eastern part of Sundarbans in the south and half of the Mymensingh District in the north. The verse seems to exclude the region to the east of the Brahmaputra and Meghna and agrees with medieval epigraphic evidence which places the heart of Vanga in the Vikrampur-bhaga comprising the Munshiganj and Madaripur subdivisions…” (Studies, পৃ.৯০)। ইহারা সকলেই সুন্দরবনের পশ্চিমাঞ্চলকে “বঙ্গ’ হইতে বাদ দিয়াছেন। তাঁহারা বোধ হয় ডুম্মনপালের লিপি দ্বারা প্রভাবিত হইয়া মনে করেন যে, যেহেতু চব্বিশ পরগনা-খুলনা এলাকায় অর্থাৎ খাড়ি অঞ্চলে লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষ দিকে ডুম্মনপাল স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন, সেহেতু ঐ এলাকা “’বঙ্গ’ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। মিনহাজ যখন ‘বঙ্গ’ রাজ্যের কথা বলেন, তখন অবশ্যই ডুম্মনপালের খাড়ি রাজ্য সেন রাজ্য হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। কিন্তু ডুম্মনপালের স্বাধীনতার ফলে সেন রাজ্য সঙ্কুচিত হয়, ‘বঙ্গ’ নামধাৱী ভৌগোলিক ভূভাগের কোন সঙ্কোচন হয় নাই।

[উৎসঃ প্রফেসর আবদুল করিম, বাংলার ইতিহাসঃ সুলতানী আমল, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ১৬-২১]

*আবদুল করিম (১ জুন, ১৯২৮- ২৪ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৭৩ – ১৯৭৫।

লিখেছেন; প্রফেসর আবদুল করিম


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]