বুধবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৭

পাহাড়ে অপ্রতিরুদ্ধ খ্রিস্টান মিশনারিরা : পর্ব - ৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের খ্রিস্টানাইজেশনের উদ্দেশ্য : ইতিহাসের নানা ঘটনার পরিক্রমায় এটা স্পষ্ট যে, ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা এবং এর সংলগ্ন মায়ানমারের কিছু পার্বত্য এলাকা ও ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ খ্যাত রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে খ্রিস্টান অধ্যুষিত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ছিল। পশ্চিমাদের এই কল্পিত রাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরের তীর থেকে শুরু করে চীনের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। এ কারণেই এই অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোকে স্থানীয় সমতলবাসীদের থেকে সুপরিকল্পিতভাবে বিচ্ছিন্ন রেখে মিশনারিদের দ্বারা খ্রিস্টান বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই। ১৯০০ সালে ব্রিটিশরা যে হিল ট্র্যাক্টস রেগুলেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণকে স্থানীয় বাঙালি জনগণ থেকে বিচ্ছন্নকরণ করে তার মূলেও ছিল তাদের সেই পরিকল্পিত রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছা। এটা করা হয়েছিল মূলত স্থানীয় বাঙালিদের থেকে পাহাড়িদের বিচ্ছিন্ন রেখে তাদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা সহজ হবে এই আকাক্সক্ষায়।

কিন্তু প্রথম দিকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়ায় ছিল ধীর গতি। তাই ব্রিটিশরা তাদের এই কল্পিত রাষ্ট্রের দ্রুত এবং সফল বাস্তবায়নের জন্য ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময়েও এই অঞ্চলটিকে ভারত কিংবা পাকিস্তান কারও অধীনেই না রাখার পক্ষপাতি ছিল। তাদের ধারণা ছিল যে, এই অঞ্চলটি ভারত কিংবা পাকিস্তানের অংশ না হলে এখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীগুলোর পক্ষে সফল এবং কার্যকর রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন সম্ভব হবে না। এই সুযোগে ব্রিটিশরাই আবার ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হয়ে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে তরান্বিত করতে পারবে। যাই হোক, সে সময় তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলেও তারা যে থেমে নেই সেটাই এখন দৃশ্যমান।
সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা যে তৎপর তা তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেই বোঝা যায়। কারণ একদিকে তারা যেমন স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোকে খ্রিস্টান বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে, তেমনি তারা এসব জনগণকে বাঙালি মুসলমান, বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনী বিদ্বেষী করে তুলছে। একই সাথে ‘আদিবাসী’ কনসেপ্ট, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীগুলোকে স্থানীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার পরিবর্তে মাতৃভাষায় শিক্ষিত করার কনসেপ্ট দিয়ে রাষ্ট্র এবং স্থানীয় জনগণ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন রাখার মিশন বাস্তবায়ন করছে। অন্যদিকে যেসব জনগোষ্ঠীর বর্ণমালা নেই তাদের ভাষাকে রোমান হরফে লেখার প্রচলন করা হচ্ছে, যাতে এসব জনগোষ্ঠীর যোগাযোগটা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র এবং তার জনগণের সাথে না হয়ে পশ্চিমাদের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়, বিশেষ করে যারা রোমান হরফ ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে হয়। পশ্চিমাদের আশীর্বাদপুষ্ট মিশনারিদের এই অপতৎপরতা যে শুধু বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় সীমিত তা কিন্তু নয়, একই মিশন নিয়ে তারা কাজ করছে মায়ানমার এবং ভারতের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোতেও।

একই সাথে তারা এসব অঞ্চলের জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টাও করছে। ভিন্ন দেশের সীমানায় বসবাস করছে একই জনগোষ্ঠীর লোকজনদের ক্ষেত্রে তাদেরকে বিশেষ বিশেষ সংগঠনের আওতায় সংগঠিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসরত চাকমা এবং ত্রিপুরাদেরকে সমন্বিত করে ইতোমধ্যে একাধিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে এসব অঞ্চলে যেসব মিশনারিরা তৎপরতা চালাচ্ছে তারাও দুর্গম ও অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করে তাদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করছে। একবার মায়ানমার থেকে এভাবে কয়েকজন মিশনারি বান্দরবানে প্রবেশের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় বেশ তোলপাড় হয়েছিল। কিন্তু দুর্গম অঞ্চলের সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সব খবর তো প্রশাসনের পক্ষে রাখাও সম্ভব না, তাই এমন ঘটনা হরহামেশায় ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং তার সংলগ্ন মায়ানমার ও ভারতের রাজ্যগুলোর এ চিত্রকে পূর্বতিমুর এবং দক্ষিণ সুদানের ইতিহাস এবং ঘটনা চিত্রের সাথে মিলিয়ে দেখলে, আশা করি সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না।


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]